Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষিকাকে মার, অভিযুক্ত নেতা

সেই ঘটনার রেশ ধরে সোমবার সকালে গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্কুলের গেটে প্রধান শিক্ষিকা তন্দ্রা চক্রবর্তীকে আটকে মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রামমোহন ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অরূপ দাস-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খানাকুল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

অজানা গ্যাসের কথা জানিয়ে ছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার। তারপর সুস্থ হয়ে শনিবার স্কুলে গিয়ে ক্লাসও করেছে খানাকুলের সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীরা। সেই ঘটনার রেশ ধরে সোমবার সকালে গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্কুলের গেটে প্রধান শিক্ষিকা তন্দ্রা চক্রবর্তীকে আটকে মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রামমোহন ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অরূপ দাস-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষিকাকে স্কুল থেকে সরানোর দাবিতে স্কুল জুড়ে পোস্টার মারা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনের লোকরা যান। পুলিশ প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে আরামবাগে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। গণ্ডগোলের জেরে স্কুলে এ দিন পঠনপাঠন হয়নি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও বিশৃঙ্খলার জেরে দেওয়া যায়নি তাও।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার দুপুরে স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকজনের অভিযোগ ছিল, কোনও গ্যাসের গন্ধেই এই অসুস্থতা। ওই দিন দমকল বাহিনী, পুলিশ-প্রশাসনের লোকেরা ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালিয়েও কোনও গ্যাস বা অস্বাস্থ্যকর কিছুর সন্ধান পায়নি। ৫০ জন ছাত্রীকে আরামবাগের নারায়ণপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করানো হয়। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুপম বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, আতঙ্ক থেকেই এই অসুস্থতা।

সেই ঘটনার রেশ টেনে সোমবার সকাল ১০টা থেকে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন প্রধান অরূপ দাস এবং তাঁর লোকজন স্কুল গেটে জমা হন। প্রধান শিক্ষিকার পথ আগলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, বচসার সময়েই অরূপ দাস তাঁকে মারধর করেন। কিছু মহিলাও প্রধান শিক্ষিকাকে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরের প্রতিবাদ করতে এসে স্থানীয় প্রকাশ রায় সহ কয়েকজন গ্রামবাসীও প্রহৃত হন।

প্রধান শিক্ষিকা তন্দ্রা চক্রবর্তী বলেন, “ছাত্রীদের অসুস্থতার পরই তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এরপরেও কয়েকজন এই হামলা করেছে। এরপর স্কুল যেতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”

প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরের অভিযোগ নিয়ে খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য অরূপ দাসের বক্তব্য, “ছাত্রীদের অসুস্থতা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার উদসীনতা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মারধরের ঘটনা ঘটেনি।”

স্কুলে তৃণমূলের এই হামলা নিয়ে অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ। স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রঘুনাথ সামন্তর অভিযোগ, “অভিভাকদের তরফে কোনও অভিযোগ নেই। তৃণমূলের একটা অংশ পরিকল্পিতভাবে স্কুলে সমস্যা তৈরি করছে। স্কুলের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিষয়টা দলে এবং মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি।”

বিষয়টি নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত জেলা পরিদর্শক (আরামাবগ) চন্দ্রশেখর জাউলিয়া বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টা আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে কেন এই বিক্ষোভ, কেন প্রধান শিক্ষিকাকে সরানোর দাবি উঠেছে সেই সংক্রান্তও কোনও অভিযোগ নেই। স্কুলে ঢুকে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।”

স্কুলে দলের নেতার হামলা নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাসগুপ্ত বলেন, “স্কুলে ঢুকে কোন অসভ্যতা মানা হবে না। বিষয়টা খতিয়ে দেখে দল ব্যবস্থা নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC School teacher তৃণমূল Khanakul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE