Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র বিক্ষোভে বদলাল নিয়ম!

বুধবার সেই অবস্থান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে প্রায় সবাইকেই পরীক্ষা বসার ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন তাঁরা।

নতুন ঘোষণার পর শিক্ষকদের সম্মান জানানোর পোস্টার। বুধবার শ্রীরামপুর কলেজে। —নিজস্ব চিত্র

নতুন ঘোষণার পর শিক্ষকদের সম্মান জানানোর পোস্টার। বুধবার শ্রীরামপুর কলেজে। —নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

পাল্টে গেল সুর! ঘুরে গেল অবস্থান!

উপস্থিতির হার যাই হোক, প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সিমেস্টারে সব পড়ুয়াকে বসতে দিতে হবে, এই দাবিতে দু’দিন ধরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আন্দোলন দেখেছে শ্রীরামপুর কলেজ। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থীদের তালিকা সংশোধন সম্ভব নয়। আর বুধবার সেই অবস্থান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে প্রায় সবাইকেই পরীক্ষা বসার ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন তাঁরা।

নতুন সিদ্ধান্ত জানার পরে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ থেকে প্রাক্তনীদের অনেকেরই প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই যদি আগে আটকানো হয়ে থাকে, তা হলে এখন কোন যুক্তিতে ছেড়ে দেওয়া হল? কেউ কেউ মনে করছেন, এটা চাপের কাছে নতিস্বীকার। এক প্রাক্তন শিক্ষকের ক্ষোভ, ‘‘এর পরে তো ছাত্রদের সব আব্দার মানতে হবে!’’ প্রাক্তন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী তথা কলেজেরই প্রাক্তন শিক্ষক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বস্তরে অনুমোদিত বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শিক্ষকেরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে পারলে ভাল হতো।’’

কলেজের উপাধ্যক্ষ বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে। বুধবার সেই চিঠি বাণিজ্য-বিভাগে পাঠানো হয়। তারা বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন তালিকা পাঠায়। বিদ্যুৎবাবুর কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট বিভাগ যে তালিকা পাঠায়, প্রশাসক হিসেবে আমরা তা মানতে বাধ্য। ওরা আজ একটি সংশোধিত তালিকা পাঠিয়েছে। সেটা গ্রহণ করা হয়েছে।’’ ওই বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কোনও একটি বিভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, শিক্ষকদের নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছিল, তাতে বিভাগের তরফে থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মাত্র। কলেজে কিছু অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেই ক্লাসের উপস্থিতি যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’

অথচ, উপস্থিতির হার কম থাকায় বিকম (সাধারণ)-এর প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষায় ১৭৭ জনের মধ্যে ১৭৪ জনকে এবং অনার্সের ক্ষেত্রে ৬৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনকে প্রথমে পরীক্ষায় বসতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সব পড়ুয়াকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে সোমবার থেকে ঘেরাও-বিক্ষোভ শুরু হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে। আন্দোলনের নামে কার্যত তাণ্ডব চলে। কলেজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, ভাঙচুর, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধাক্কাধাক্কি-সহ নানা অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। অসুস্থ শিক্ষককে কলেজ থেকে বের করতেও বাধা পেতে হয়। দুই শিক্ষিকা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন। সোমবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুক্তি পান। মঙ্গলবারেও রাত পর্যন্ত কলেজে ঘেরাও চলে। আন্দোলনের ধরন নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শিক্ষামন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছিলেন, পড়ুয়াদের এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।

অথচ, বুধবার বিকম (সাধারণ)-এ ১৭ জন এবং অনার্সের দু’জন বাদে প্রত্যেককেই পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিকেলে সংশোধিত তালিকা বেরোতেই আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা আনন্দে হইচই শুরু করে দেন। শ্রীরামপুরে তৃণমূলের ছাত্র-নেতা শান্তনু বাগের দাবি, ‘‘ ‘ছাত্র-ঐক্যের জয় হল।’’

অনেকেই অবশ্য বলছেন, এ ভাবে বিক্ষোভ সামাল দেওয়া গেলেও আখেরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। এর পরে ক্লাস না-করলেও ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore College Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE