Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পড়ে কোটি টাকার যন্ত্র, নেই বিশেষজ্ঞ

ছ’মাসেও খোলেনি মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন জেলার সমস্ত মাটির নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার টালিগঞ্জে রাজ্য মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতেই দেরি হয়ে যায় বলে জেলা কৃষি দফতরের দাবি। সেই অসুবিধা দূর করতে বছর দুই আগে উলুবেড়িয়ায় মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি দফতর।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

বিদেশ থেকে আনা যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি বিভাগের মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। হাওড়া জেলায় গড়ে উঠবে রাজ্যের সেরা মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র— এমনই পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের। কিন্তু সে জন্য বহাল করা হয়েছে দু’জন সাধারণ কর্মী এবং দু’জন চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কার্যত তাঁদের কোনও কাজ নেই। কারণ ছ’মাস আগে যন্ত্র এলেও মাটি পরীক্ষার কাজ শুরুই করা যায়নি। নিয়োগ করা যায়নি বিশেষজ্ঞ।

রাজ্যের সর্বত্রই মাটি পরীক্ষা করিয়ে চাষিদের ‘সয়েল হেল্থ কার্ড’ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হাওড়া জেলাতেও প্রতি বছর হাজার হাজার চাষি মাটি পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেন। ব্লক কৃষি দফতরের কর্মীরা চাষিদের কাছে গিয়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে আনেন। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, রিপোর্ট পেতে পেতে পেরিয়ে যায় ছ’মাস। কখনও এক বছর। ফলে জমিতে কী ধরনের ফসল চাষ করতে হবে সঠিক সময়ে তা জানতেই পারেন না তাঁরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন জেলার সমস্ত মাটির নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার টালিগঞ্জে রাজ্য মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতেই দেরি হয়ে যায় বলে জেলা কৃষি দফতরের দাবি। সেই অসুবিধা দূর করতে বছর দুই আগে উলুবেড়িয়ায় মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি দফতর। উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিকের দফতরের পাশে কৃষক বাজারের দু’টি ঘর নিয়ে তা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ছ’মাস আগে বিদেশ থেকে আনানো হয়েছে প্রায় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। সে সব বসানো রয়েছে কৃষক বাজারের ওই ঘরেই। অভিযোগ, কাজ তো হয়ই না, এমনি ন্যূনতম নিরাপত্তাও নেই দামি যন্ত্রগুলির।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করতে হলে একজন কেমিস্ট এবং আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ কর্মী দরকার। কাউকেই এখানে নিয়োগ করা হয়নি। যে চার জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের কোনও কাজ নেই। কৃষি আধিকারিকদের একাংশই আশঙ্কা করছেন, দিনের পর দিন চালু না করে ফেলে রাখলে এই সব যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত তাঁরা।

এক সময় কৃষক বাজার পাহারা দিতেন উলুবেড়িয়া থানার আট সিভিক ভ‌লান্টিয়ার। কিন্তু মাস ছয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উলুবেড়িয়া থানা ভেঙে নতুন রাজাপুর থানা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন পু‌লিশ কর্মী নিয়োগ হয়নি। উলুবেড়িয়ার সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেককে রাজাপুরে পাঠানো হয়েছে। ফলে কৃষক বাজারে আর সিভিক ভলান্টিয়ার নেই। জেলা কৃষি দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘বাজারে কোনও প্রহরা নেই। মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দামি যন্ত্রপাতি চুরি গেলে তার দায় কে নেবে, কেউ জানে না।’’ আবার মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু না হওয়ায় চাষিদের সমস্যাও মেটেনি।

রাজ্য জুড়ে মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি নিয়ন্ত্রণ করে কলকাতার রাজ্য মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র। কেন্দ্রের অন্যতম উপ-অধিকর্তা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা রাজ্য কৃষি দফতরে জানিয়েছি। কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE