Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছটে ডিজে-তে লাগাম চুঁচুড়ায়, তাণ্ডব অন্যত্র

ছটপুজোয় পুণ্যার্থীরা জড়ো হন গঙ্গা বা অন্য জলাশয়ে। সেখানে পুজো চলে। ঘাটে তো বটেই, যাওয়াতের পথেও তারস্বরে ডিজে বাজানো এবং শব্দবাজি ফাটানোই কার্যত দস্তুর হয়ে গিয়েছে।

উৎসব: তাসা বাজিয়ে ছট পূজায় পূণ্যার্থীরা। —নিজস্ব িচত্র

উৎসব: তাসা বাজিয়ে ছট পূজায় পূণ্যার্থীরা। —নিজস্ব িচত্র

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০৫
Share: Save:

ছটপুজোয় ডিজে-র উৎপাত অনেকটাই কমেছে হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায়। কিন্তু অন্যত্র শব্দ-তাণ্ডব থেকে রেহাই মিলল না সাধারণ মানুষের। তাঁরা অতিষ্ঠ হলেন শব্দবাজির কানফাটানো আওয়াজেও।

ছটপুজোয় পুণ্যার্থীরা জড়ো হন গঙ্গা বা অন্য জলাশয়ে। সেখানে পুজো চলে। ঘাটে তো বটেই, যাওয়াতের পথেও তারস্বরে ডিজে বাজানো এবং শব্দবাজি ফাটানোই কার্যত দস্তুর হয়ে গিয়েছে। তাতে বহু মানুষের অসুবিধা হলেও আনন্দে মেতে থাকা লোকজন কর্ণপাত করেন না। এই পরিস্থিতি বদলের দাবিতে ডিজে এবং শব্দবাজির বিরুদ্ধে চুঁচুড়ায় নাগরিক আন্দোলন চলছে। চন্দননগর কমিশনারেটের উদ্যোগেও সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। ছটপুজোর আগেও নাগরিক সংগঠন এবং পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতা শিবির হয়।

চুঁচুড়া এবং ব্যান্ডেলের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, শনিবার বিকেল এবং রবিবার ভোরে গঙ্গায় যাতায়াতের পথে ডিজের পরিবর্তে পুণ্যার্থীদের সঙ্গে ছিল তাসা বা ব্যান্ড। তার তালেই নাচানাচি চলেছে। চুঁচুড়া ও ব্যান্ডেলে গঙ্গার পাঁচ-ছ’টি ঘাটে এই ছবি দেখা গিয়েছে। স্থানীয় একটি বিজ্ঞান সংস্থার সদস্যেরা জানান, তাঁরা পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছিলেন। গঙ্গার ঘাটে দু’-একটি ক্ষেত্রে ডিজে বাজার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। তবে, চুঁচুড়ার ময়নাডাঙা, ব্যান্ডেলের নলডাঙা-সহ দু’-একটি জায়গায় ডিজে বেজেছে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘যেখানে লাগাতার প্রচার হচ্ছে, সেখানে যে কাজ হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। প্রচার আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। বিয়েবাড়িতে বা পিকনিকেও যাতে ডিজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এ বার তা নিয়েও আমরা প্রচার করব।’’

তবে, চুঁচুড়া কিছুটা পারলেও চন্দননগর, শ্রীরামপুর, রিষড়ার বিস্তীর্ণ জায়গায় শব্দের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়েছেন মানুষ। রিষড়ার চারবাতি এলাকার এক যুবক বলেন, ‘‘কাকভোরেও এত শব্দবাজি ফেটেছে, বলার কথা নয়। বাজির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছে।’’ শ্রীরামপুরের রায়ঘাট এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ডিজে এবং শব্দবাজির উৎপাৎ মাত্রা ছাড়ায়। একই পরিস্থিতি ছিল চন্দননগরেও।

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর সময়েও ডিজে এবং শব্দবাজির দাপট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু ছটপুজোয় নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ডিজে বেজেছে, চকোলেট বোমা ফেটেছে। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’

অনেকেই বলছেন, চুঁচুড়ায় নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে পুলিশ শব্দবাজি বন্ধে সচেতনতা ছড়াতে অনেক বেশি সক্রিয় ছিল। চুঁচুড়া থানার উদ্যোগে শব্দদূষণ বিরোধী মিছিলে পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরও শামিল হয়েছেন। দিন কয়েক আগে ভদ্রেশ্বরেও পুলিশের উদ্যোগে মিছিল হয়। কিন্তু সর্বত্র পুলিশের এই উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কোথাও নিয়ম রক্ষায় পুলিশ কোনও মতে প্রচার সেরেছে বলে অভিযোগ।

শ্রীরামপুরের রায়ঘাটের কাছে শুক্রবার নাগরিক উদ্যোগে প্রচার হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দফতরের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘পরিবেশ সচেতন মানুষের পাশাপাশি পুলিশ সক্রিয় হলে যে ফল হয়, কিছুটা হলেও চুঁচুড়ায় তা দেখা যাচ্ছে। অন্য জায়গাতেও এই সক্রিয়তা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Puja Chinsurah Sound Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE