Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গতি মানেই বেপরোয়া নয়

শিবাজীর ‘ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া টি’-এর মতো গাড়িগুলিকে দেখলে মনে হয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সেগুলি হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মানে এ নয় যে গাড়িগুলি সব সময়ে বেপরোয়া ভাবে চালানো হচ্ছে।

ভরত পারেখ

ভরত পারেখ

ভরত পারেখ
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০১:৩৬
Share: Save:

রবিবার সকালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ‘সুপারকার’ নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন এক দল উৎসাহী। ব্যান্ডেলে আমার কারখানায় যাতায়াতের পথে অনেক সময়েই ওঁদের গাড়িগুলি দেখতে পেতাম। গত কাল দুর্ঘটনায় শিবাজী রায়ের মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

শিবাজীর ‘ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া টি’-এর মতো গাড়িগুলিকে দেখলে মনে হয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সেগুলি হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মানে এ নয় যে গাড়িগুলি সব সময়ে বেপরোয়া ভাবে চালানো হচ্ছে। এই গাড়িগুলির গতি এত দ্রুত বাড়ে যে মনে হয় তারা হঠাৎই অনেক দূরে মিলিয়ে গেল। ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে পৌঁছতে ‘ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া টি’-এর সময় লাগে ৪ সেকেন্ডেরও কম। অর্থাৎ কেউ ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে ওই গাড়ি অনেক এগিয়ে যাবে।

আগেই বলেছি ওই রাস্তা ধরেই আমার ব্যান্ডেলের কারখানায় যাতায়াত করি। অনেক সময়ে ৪ লেনের সড়ক হওয়া সত্ত্বেও বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির জন্য বিপাকে পড়তে হয়। ডোমজু়ড় যাওয়ার পথে ফ্লাইওভার থেকে নামার পরে এমন একটা জায়গা আছে যেখানে হঠাৎ কোনও গাড়ি পাশ থেকে সড়কে উঠে এলে আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। গাড়িচালকদের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ব্লাইন্ড কর্নার’। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

আর একটি বিষয় চালকদের যন্ত্রণা বাড়ায়। ট্রাকের মতো ভারী গাড়িকে ডান দিক থেকে ‘ওভারটেক’ করতে গেলে অনেক সময়ে সেগুলি আরও ডান দিকে সরে আসে। তখন খুব দক্ষ চালক না হলে বিপদ ঘটতে পারে। এটা এড়াতে অনেক সময়েই বাঁদিক থেকে ‘ওভারটেক’ করা হয়। কিন্তু সেটা একেবারে বেআইনি।

গাড়ির গতি কমানোর জন্য রাস্তায় ব্যবহৃত ‘বেরিয়ার’-এর র‌ং এখন নীল-সাদা। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ওই রং হলুদ-কালো হওয়া প্রয়োজন।

রাজ্য সরকারের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার অভিযান প্রশংসনীয়। কিন্তু কিছু নিয়ম ক়়ড়া ভাবে মানার ব্যবস্থা করলে নিরাপদে গাড়ি চালানোর সুযোগ বাড়ে। হাওড়া পুলিশের কর্মীরা মোটের উপরে ট্রাফিক সামলানোর কাজ ভালই করেন। তবে ‘ওভারটেক’ করার ক্ষেত্রে নিয়ম কড়া ভাবে মানতে বাধ্য করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক কমবে বলে আমার মনে হয়।

আমার মনে হয় না ‘সুপারকার’ নিয়ে বেরোনো উৎসাহীর দল একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিলেন। পরিবারের সদস্যেরাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। ফলে এমন প্রতিযোগিতা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। শিবাজী রায়কে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। অত্যন্ত ভদ্র এই যুবকের মৃত্যু সত্যিই বেদনাদায়ক।

(লেখক প্রাক্তন র‌্যালি চ্যাম্পিয়ন)

অনুলিখন: অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE