Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Education

দুধ বিক্রি করে পড়াশোনা, মাধ্যমিকে চমক অর্পিতার

বাবার মৃত্যুর পরে অর্পিতার পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। মেয়ে আদৌ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মা কল্যাণীদেবী।

বাড়িতে অর্পিতা ও তার মা। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে অর্পিতা ও তার মা। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

বাবার আচমকা মৃত্যুতে গরিব অর্পিতা খাটুয়ার পড়ার ঘরের আঁধারটা আরও জমাট হয়েছিল। কালক্রমে ঘরে দারিদ্রের চিহ্নগুলি আরও প্রকট হয়। ভবিষ্যত অনিশ্চিত জেনেও হাল ছাড়েনি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্পিতা। গরুর দুধ বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ তুলেছে গত কয়েক মাস। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। যার ফল বলছে, মাধ্যমিকে ৬১৩ পেয়েছে শ্যামপুরের শ্রীকোল হাইস্কুলের ছাত্রী অর্পিতা। ‘‘লড়াইটা কিন্তু ছিল বেশ কঠিন,’’ বলছে অর্পিতা। বারবার তার স্মৃতিতে হানা দিয়েছে গত বছরের অক্টোবর সেই ঘটনা। অর্পিতার কথায়, ‘‘মাধ্যমিকের টেস্ট শুরুর ঠিক আগের ঘটনা। তখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তখনই ঘটে বিপর্যয়। দাদাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য বেঙ্গালুরু নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা। ট্রেনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বাবার দেহ নিয়ে ফিরে আসে দাদা।’’ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে অর্পিতার, ‘‘মা দুধ বিক্রি করে পড়িয়েছেন আমাকে। আমিও দুধ বিক্রি করেছি। মা অনেক কষ্ট করেছে আমার জন্য। আজকের দিনটা বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এ আক্ষেপ ঘুচবে না।’’

বাবার মৃত্যুর পরে অর্পিতার পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। মেয়ে আদৌ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মা কল্যাণীদেবী। কারণ, স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনটি গরুর দুধ বিক্রি করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ তুলেছেন তিনি। ছেলে দোকানে কাজ করে যে টাকা আয় করে, তার উপরে ভরসা করে মেয়ের পড়াশোনা চালানো যে সম্ভব নয়, তা জানতেন কল্যাণীদেবী। কিন্তু যা জানতেন না, তা হল ততদিনে তাঁর মেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। চেষ্টা সফল অর্পিতার। তার মায়েরও। চোখের আগল ঠেলে বেরিয়ে আসা জল মুছে বললেন, ‘‘স্বামী হঠাৎ ছেড়ে চলে গেলেন। কেমন যেন অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। মেয়ে এ ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ভাবতে পারিনি। দুধ বেচেই মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করব।’’

মাধ্যমিকে অর্পিতা বাংলায় পেয়েছে ৮২। ইংরাজিতে ৮৭, গণিতে ৯৪, জীবন বিজ্ঞানে ৮০, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৭, ভূগোলে ৯৩ আর ইতিহাস ৯০ পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় অর্পিতা।

তার বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। কল্যাণীদেবী বলেন, ‘‘ওর বাবার ইচ্ছাপূরণ করার জন্য মেয়েকে কষ্ট করে হলেও পড়াশোনা করাব।’’

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE