Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয়েও সমস্যা বহু স্কুলে

নিয়মের বাধায় নতুন বিষয় চালুর় ছাড়পত্র মিলছে না

নিয়মই বাধা। তাই চাহিদা থাকলেও নতুন নতুন বিষয় চালু হচ্ছে না উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে। জেলার বিভিন্ন স্কুলে পছন্দের বিষয় না পেয়ে তাই গতানুগতিক ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করতে হচ্ছে বহু ছাত্রছাত্রীকে। গত এক দশকে হুগলি জেলায় কয়েক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে।

প্রকাশ পাল
হুগলি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

নিয়মই বাধা। তাই চাহিদা থাকলেও নতুন নতুন বিষয় চালু হচ্ছে না উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে।

জেলার বিভিন্ন স্কুলে পছন্দের বিষয় না পেয়ে তাই গতানুগতিক ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করতে হচ্ছে বহু ছাত্রছাত্রীকে। গত এক দশকে হুগলি জেলায় কয়েক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। এতে বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হয়েছে। আগে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়র সংখ্যা কম থাকায় মাধ্যমিকের পরে বহু ছেলেমেয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হত। অনেক ক্ষেত্রে কাছাকাছি স্কুল না থাকায় দূরের স্কুলে গিয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই পড়াশোনায় ছেদ পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এখন সেই সমস্যা না থাকলেও অধিকাংশ জায়গাতেই কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা মনের মতো বিষয় না পেয়ে গতানুগতিক বিষয় নিয়েই পড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার তালিকায় রয়েছে নিউট্রিশন, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, হোম ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হোম নার্সারি, সাংবাদিকতা, মাস কমিউনিকেশন, সাইকোলজির মতো বিষয়। বিষয়গুলি কাউন্সিলের তালিকাতেও রয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কিছু স্কুলেই এই সব বিষয় পড়ানো হয়। অধিকাংশ স্কুলেই এ সব বিষয় না থাকায় ইচ্ছে বা মেধা থাকলেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। শুধু তাই নয়, স্রেফ নিয়মের গেরোয় বহু স্কুল এই সব নতুন বিষয় চালুর ইচ্ছে থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলে আবেদনই করতে পারছেন না।

কেন?

শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, নতুন কোনও বিষয় চালু করতে হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলে সেই বিষয়ের স্থায়ী শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক। তা না হলে আবেদনই করা যাবে না। হরিপাল ব্লকের একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ধরা যাক, সাইকোলজি নিয়ে এখানে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ রয়েছে। তাঁরা বিষয়টি পড়াতেও চান। কিন্তু মাধ্যমিকে যে হেতু বিষয়টি নেই, তাই স্থায়ী শিক্ষক থাকার প্রশ্ন নেই। ফলে চাহিদা থাকলেও কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করা যাচ্ছে না।’’এমনকী অনেক জায়গা স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় বিষয়টি তুলে দিতে হয়েছে বলেও শিক্ষকদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে নিয়ম শিথিল করলে অনেক স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিকে নতুন নতুন বিষয় চালু করা সহজ। শর্তসাপেক্ষে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেও নতুন বিষয় চালু করা যায়।

হরিপাল গুরুদয়াল ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া অদিতি ভাণ্ডারী বলেন, ‘‘ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা এবং সাইকোলজি নিয়ে পড়ব। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানলাম, ধারেকাছে কোনও স্কুলে এই বিষয় পড়ানো হয় না। তাই গতানুগতিক ভাবে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হতে হল।’’ হরিপালেরই জামাইবাটি গ্রামের তনুশ্রী কোলের বক্তব্য, ‘‘নিউট্রিশন বা মিউজিক নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় পড়ব!’’ শ্রীরামপুরের চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউশনে স্ট্যাটিস্টিকস পড়ানো হত। স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় এ বার ওই বিষয়টি পড়ানোর অনুমোদন দেয়নি কাউন্সিল। স্কুলের এক শিক্ষকের আক্ষেপ, অনেক মেধাবি ছেলে স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়েছে। অঙ্ক অলিম্পিয়াডে সোনাজয়ী থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে তৃতীয় হওয়া ছাত্র রয়েছে এই তালিকায়। এ বার স্ট্যাটিস্টিকস না থাকায় অনেক ছেলে অন্য স্কুলে চলে গেল। প্রধান শিক্ষক সুশীলকুমার সাহার বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করুক কাউন্সিল। জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘কাউন্সিল অন্তত আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে নতুন বিষয় পড়ানোর অনুমতি দিক। পরে তারা যদি মনে করে সব ঠিক চলছে, তখন না হয় স্থায়ী পদের অনুমোদন দেবে।’’ একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন তারকেশ্বরের রামনগর নুটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমেশ চট্টোপাধ্যায়।

মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘একে তো বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের সমস্যায় পড়তে হয়। কাউন্সিলের বেঁধে দেওয়া কম্বিনেশন বাছতে হয়। তার উপর নতুন বিষয় না আসায় আখেরে রাজ্যের ছেলেমেয়েরাই পিছিয়ে পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE