Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফের ডিজে-তাণ্ডব, রাস্তায় পড়ুয়ারাও

স্থানীয় একটি বিজ্ঞান সংস্থার উদ্যোগে ডিজে-বিরোধী নাগরিক মিছিলে ওই মেয়েটির মতো অনেকেই অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।

প্রতিবাদে: জ্ঞান সংস্থার উদ্যোগে ডিজে-বিরোধী নাগরিক মিছিলে শামিল পড়ুয়ারা। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রতিবাদে: জ্ঞান সংস্থার উদ্যোগে ডিজে-বিরোধী নাগরিক মিছিলে শামিল পড়ুয়ারা। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৯
Share: Save:

প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।

সোমবার সকালে চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে দাঁড়িয়ে স্কুলপড়ুয়া মেয়েটি বলছিল তার সমস্যার কথা। বলছিল, এই পিকনিকের মরসুমে যে ভাবে তার বাড়ির সামনে ডিজে বাজছে তাতে পড়াশোনার সমস্যার কথা। আশপাশে থানা থেকে শুরু করে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ লাইন, জেলাশাসকের অফিস-সহ নানা সরকারি দফতর রয়েছে। কিন্তু মেয়েটির অসুবিধে কবে দূর হবে, সেই উত্তর দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া গেল না।

স্থানীয় একটি বিজ্ঞান সংস্থার উদ্যোগে ডিজে-বিরোধী নাগরিক মিছিলে ওই মেয়েটির মতো অনেকেই অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। অভিযোগ, এ বার দুর্গাপুজো থেকে ছটপুজো পর্যন্ত চুঁচুড়ায় ডিজে বক্স অনেক নিয়ন্ত্রিত থাকলেও চড়ুইভাতির মরসুম আসতেই ডিজের দৌরাত্ম্য ফিরে এসেছে। মিছিলটি ঘড়ির মোড় থেকে বেরিয়ে আদালতের আশপাশের রাস্তা, ময়দান-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরে। বিভিন্ন পেশার এবং বয়সের মানুষের সঙ্গে শহরের দু’টি স্কুলের প্রায় আশি জন ছাত্রছাত্রী পা মেলায়। মিছিলকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। লিফলেট বিলি করা হয়। ডিজের বিপদ এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে পথসভা হয়। ছাত্রছাত্রীরাও বক্তব্য পেশ করে।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের বক্তব্য, বহু মানুষ অন্য জায়গা থেকে এই জেলায় চড়ুইভাতি করতে আসেন। তাঁরা সেখান থেকেই ডিজে নিয়ে ঢুকে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভিতরের রাস্তা দিয়ে সেগুলো চলে যায়। ফলে, রাস্তাঘাটে ডিজে আটকানো সম্ভব হয় না। ডিসি (সদর) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিজে পুরোপুরি বন্ধ করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা দরকার। পুলিশ এ নিয়ে চেষ্টা করছে। প্রয়োজনে পিকনিক স্পটে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে আমরা সচেতন করব।’’

ওই বিজ্ঞান সংস্থার তরফে বেশ কিছু দিন ধরেই ডিজে-র দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। মিছিল, সভা, পোস্টার সাঁটা— চলছেই। দুর্গাপুজোর সময় থেকে তাদের সঙ্গে পুলিশও পথে নামে। শহরবাসীর অনেকেই জানান, তাতে কাজ হয়েছিল ভালই। কিন্তু গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ‘ডিজে আতঙ্ক’ ফিরে এসেছে। বিভিন্ন পিকনিক স্পটে চলছে ডিজের রমরমা। চড়ুইভাতিতে যাওয়ার পথে ট্রাক বা ম্যাটাডরে পেল্লাই ডিজে বক্স নিয়ে তারস্বরে গান বাজানো হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তা দেখেও দেখছে না বলে অভিযোগ।

মিছিলে পা মেলানো এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘আজ মিছিলের সময়েই দেখা গেল, ডিজে বক্স বাজাতে বাজাতে একদল লোক ট্রাকে চেপে চড়ুইভাতি করতে যাচ্ছেন। পুলিশ লাইনের পাশ দিয়েই ট্রাকটি গেল। কেউ বাধা দেয়নি।’’ চুঁচুড়া বালিকা শিক্ষামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতি প্রামাণিক বলে, ‘‘উৎসব-অনুষ্ঠানে ডিজে বাজানো যেন রীতি হয়ে গিয়েছে। এতে মানুষ, পশুপাখি— সবারই ক্ষতি হয়। অবিলম্বে এই তীব্র আওয়াজ বন্ধ করা দরকার।’’ এই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির শ্রাচী ঘোষের কথায়, ‘‘ডিজের জন্য পড়াশোনার ক্ষতি হয়। যাঁরা ডিজে বাজান, বারণ করলেও শোনেন না। পশুপাখিদের পক্ষে এই আওয়াজ সহ্য করা আরও কঠিন। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা ‌নিক।’’

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুবর্ণা কুণ্ডু এবং শিবচন্দ্র সোম ট্রেনিং অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক রাজীব সিংহ এ নিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি বলে মনে করেন। সুবর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘এ বার ছটপুজোতেও ডিজের দৌরাত্ম্য তেমন না-থাকায় আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু ফের দেখছি একই অবস্থা। যাঁরা ডিজে বাজা‌ন, তাঁরা সহ-নাগরিকদের সমস্যার কথা বুঝুন।’’ ডিজে বন্ধের দাবিতে শুক্রবার চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন জায়গায় পথসভা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound Pollution DJ Protest Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE