গোলমাল দলিল লেখক এবং দলিলের নকল কপি লেখকদের (কপি রাইটার) মধ্যে। যার জেরে কাজ বন্ধ জগৎবল্লভপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। দিন দশেক ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় হয়রান হতে হচ্ছে দফতরে জমি-বাড়ির কাজে আসা লোকজনদের। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দু’পক্ষই অনড়। সমস্যার সমাধানে সোমবার প্রশাসন দু’ পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, দলিল লেখকদের সঙ্গে কপি রাইটারদের গোলমালের সূত্রপাত পাওনা-গন্ডা নিয়ে। সম্প্রতি কপি রাইটাররা বেশি টাকা দাবি করতে থাকেন। দলিল লেখকরা তা দিতে অস্বীকার করেন। এর থেকেই দ্বন্দ্বের শুরু হয়। তার জেরে দলিল লেখকরা জমির দলিল লেখা বন্ধ করে দেন। সাব-রেজিস্টার শিশির কুমার বেরা বলেন, ‘‘বেশ কয়েকদিন ধরে রেজিস্ট্রি অফিসের কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। জেলা রেজিস্টারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও জমি কেনা হলে আসল দলিলের সঙ্গে একটি নকল দলিল তৈরি করতে হয়। সেই নকল দলিলটি লেখেন দলিলের কপি রাইটাররা। নকল দলিলটি সরকারের ঘরে জমা থাকে আর আসল দলিলটি ক্রেতার কাছে থাকে। যাতে কোনও কারণে আসল দলিলটি হারিয়ে গেলে সরকারের কাছে থাকা নকল দলিল থেকে প্রত্যয়িত প্রতিলিপি (সার্টিফায়েড কপি) বের করা যায়। সম্প্রতি কম্পিউটারের মাধ্যমে দলিল সংক্রান্ত নানা কাজ হওয়ায় সরকারি অফিসে কম্পিউটারে দলিল আপলোড থাকে। ফলে নকল দলিল তৈরির প্রয়োজন আর নেই। কিন্তু কম্পিউটার বিভ্রাটের কথা মাথায় রেখেই নকল দলিল লেখার ব্যবস্থা এখনও চালু রয়েছে। যা লেখেন সরকার স্বীকৃত নকল দলিল লেখকরা বা কপি রাইটাররা।
জগৎবল্লভপুরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কপি রাইটাররা দলিল পিছু ২০০ টাকা পান। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা দলিল পিছু ৩০০ টাকা দাবি করেন। কপি রাইটারদের তরফে তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০০ টাকায় আর চলছে না। কারণ কপি রাইটের ফর্ম সহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ৩০০ টাকা করে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু দলিল লেখকরা তা দিতে না চেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ তাঁদের আরও দাবি, অন্য জায়গা থেকে কেউ দলিল লিখতে এলেও তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এ বিষয়ে দলিল লেখকদের সংগঠনের তরফে কেউ মুখ খুলতে চাননি।
দলিল লেখক এবং কপি রাইটাররা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। জমি-বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে। অথচ ক্রেতা তার দলিল তৈরি করতে পারছেন না। এই ডামাডোলে মিউটেশনের কাজও (জমির চরিত্র বদলের কাজ) বন্ধ। নানা কাজের জন্য পরচা তুলতে এলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বোপরি লক্ষ লক্ষ টাকা কোষাগারে জমা না পড়ায় ক্ষতি হচ্ছে সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy