Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর আগে সাসপেনশন নোটিস নর্থব্রুক জুটমিলে

সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও কোনও ফল হয়নি। এরপর সোমবার রাতে কাজে যোগ দিতে আসা শ্রমিকদের মিলে ঢ়ুকতে দেওয়া হয়নি।

তালা: সুনসান নর্থব্রুক মিল চত্বর। নিজস্ব চিত্র

তালা: সুনসান নর্থব্রুক মিল চত্বর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

পুজোর মুখে ফের সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস ঝুলল ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক জুটমিলে। মঙ্গলবার সকালে মিলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কাজে এসে ফিরে যান শ্রমিকরা। মিল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিক অসন্তোষের জেরেই উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিল কবে খুলবে সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি। মিল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়লেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক।

জুট মিলের শ্রমিকদের বেশ কয়েক দিন ধরে অভিযোগ ছিল, কারখানা কর্তৃপক্ষ কম টাকায় অতিরিক্ত কাজ করাচ্ছে। সময়সীমার বেশি সময় মিলে কাজ করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমছিল। গত রবিবার মিলের ওয়াইন্ডিং বিভাগের এক শ্রমিক অতিরিক্ত কাজের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, এরপরই ওই শ্রমিককে মিলের বাইরে বের করে দেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে বিভাগের সমস্ত শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দেন। সোমবার ওই বিভাগে কোনও শ্রমিক কাজে যোগ না দেওয়ায় মিলের উৎপাদন ব্যাহত হয়।

সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও কোনও ফল হয়নি। এরপর সোমবার রাতে কাজে যোগ দিতে আসা শ্রমিকদের মিলে ঢ়ুকতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা দেখেন, গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস ঝুলছে। অশান্তি এড়াতে এ দিন সকাল থেকেই মিল চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

২০১৪ সালে এই নর্থ ব্রুক জুট মিলেই শ্রমিক অসন্তোষের জেরে উত্তেজিত শ্রমিকদের হাতে মিলকর্তাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে ২০১৫ সালে মিল চালু হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দর্শিয়ে ফের মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর সরকারি হস্তক্ষেপে চালু হয় মিল।

মিলের তাঁত বিভাগের কর্মী মহম্মদ কামারুদ্দিনের কথায়, ‘‘অনেক বছর এই মিলে কাজ করছি। আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। কর্তৃপক্ষের এক তরফা নীতির ফলে গত কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষ আর শ্রমিকদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে।’’ একই অভিযোগ মিলের অন্য শ্রমিকদেরও। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো মিল বন্ধ করে দিচ্ছেন। পুজোর মুখে এভাবে মিল বন্ধ করায় সংসার কী ভাবে চালাবেন, সেই দুশ্চিন্তাও যাচ্ছে না তাঁদের।

তবে মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘শ্রমিকদের অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও নির্দেশ দিলে সেই দাবি না মেনে আন্দোলন শুরু করে দেন শ্রমিকরা। তার ফলে মিলের উৎপাদন ব্যহত হয়। বাধ্য হয়েই তখন মিল বন্ধ রাখতে হয়।’’ চন্দননগরের শ্রম অধিকর্তা আশিস সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ হঠাৎ মি‌ল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে মিল চালুর চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE