Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাপের বাড়ি আসতেই উদ্ধার বালিকা-বধূ

স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাড়ির লোকজন। বিষয়টি কানে যেতে সিঙ্গুর ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশের আধিকারিকরা বাড়িতে গিয়ে বন্ধ করে দেন। ঘটনাটি মাস দু’য়েক আগের। আধিকারিকরা ফিরে যেতেই মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেন অভিভাবকরা।

প্রকাশ পাল
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাড়ির লোকজন। বিষয়টি কানে যেতে সিঙ্গুর ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশের আধিকারিকরা বাড়িতে গিয়ে বন্ধ করে দেন। ঘটনাটি মাস দু’য়েক আগের। আধিকারিকরা ফিরে যেতেই মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেন অভিভাবকরা। অভিযোগ এমনটাই। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকেরা। তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে।

জানা গিয়েছে, মেয়েটির বয়স সবে পনেরো পেরিয়েছে। বাড়ি সিঙ্গুরের নোয়াপাড়ায়। সে স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত বছরের শেষ দিক থেকেই মেয়েটির বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু করেন বাড়ির লোকেরা। গ্রামের শিশু সুরক্ষা কমিটি বিষয়টি জানতে পেরে আপত্তি জানায়। কিন্তু আপত্তি ধোপে টেকেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয় সিঙ্গুরেরই এক যুবকের সঙ্গে। চাইল্ড লাইনে খবর পৌঁছনোর পরে বিডিও দফতর এবং থানার অফিসাররা গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন।

অভিযোগ, প্রশাসনের বিধিনিষেধ মানেননি কিশোরীর পরিবারের লোকেরা। লুকিয়ে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পাত্র বিদেশে সোনা-রুপোর কাজ করতেন। এখন সিঙ্গুরেই থাকেন। চাইল্ড লাইনে ফের খবর আসে। নাবালিকা ‘বধূ’টি বৃহস্পতিবার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে এসেছিল। ওই দিনই চাইল্ড লাইন, বিডিও অফিস, জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এবং পুলিশ অফিসাররা বাড়িতে যান। মেয়েটিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়।

চাইল্ড লাইনের এক অফিসার বলেন, ‘‘মেয়েটিকে আপাতত উত্তরপাড়ার একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ওর পড়াশোনাতেও ছেদ পড়ে গিয়েছে। মেয়েটির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য কী করা যায়, সেটাই দেখতে হবে। মেয়েটির কাউন্সেলিং করতে হবে। প্রয়োজনে পাত্র এবং তাঁর বাড়ির লোকজনকেও ডেকে পাঠানো হবে।’’ চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না।’’

কয়েক মাস আগে চণ্ডীতলার শ্বশুরবাড়ি থেকে কানাইপুরের দুই নাবালিকাকে উদ্ধার করেন প্রশাসনের অফিসাররা। ওই ক্ষেত্রেও প্রশাসনের তরফে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পরেও লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ।

সিঙ্গুরের বিডিও তথা ব্লকের ম্যারেজ প্রিভেনশন অফিসার সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েটির অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করা হবে।’’ ব্লক প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের বক্তব্য, নাবালিকার বিয়ে দিলে আখেরে তারই ক্ষতি হয়। এটা না বুঝে যে বাবা-মায়েরা প্রশাসনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে এবং আইন অমান্য করে অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে অন্যরাও সচেতন হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teenage bride Singur Child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE