Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
higher secondary

এগিয়ে চলেছেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত সোমা বর্মণ

প্রতি পদে থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করে এমন ফল করা সোমা বর্মণের পরবর্তী লক্ষও স্থির। হিসাবশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে পড়তে চান তিনি।

সোমা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

সোমা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
রিষড়া শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৩:৪১
Share: Save:

পর্যাপ্ত রক্তের জোগান দিতে পারে না তাঁর শরীর। তিন সপ্তাহ পর পর রক্ত দিতে হয়। অপরের রক্ত শিরা-ধমনীতে ছুটতে শুরু করলে অসুস্থতা দূর হয়। জটিল রোগের বাসা তাঁকে বারো মাস কী ভাবে কাবু করে রাখে, উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট দেখে তা অবশ্য বোঝার উপায় নেই। সেখানে সার্বিক নম্বর— ৪১৩। গ্রেড— ‘এ প্লাস’। প্রতি পদে থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করে এমন ফল করা সোমা বর্মণের পরবর্তী লক্ষও স্থির। হিসাবশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে পড়তে চান তিনি। সোমা থাকেন হুগলির রিষড়া পঞ্চায়েতের কুমারডিঙি শান্তিগড়ে। শৈশবেই থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু রোগ তাঁকে দমাতে পারেনি। মাধ্যমিকে তিনি পেয়েছিলেন ৪৫১। বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন রিষড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালে গিয়ে রক্ত নিতে হয়েছে। সোমা জানান, তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না। রক্ত কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটাচলার ক্ষমতা থাকে না। রক্ত নেওয়ার পরেও দু’-এক দিন ক্লান্তি থেকে যায়। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত স্কুলে বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেতে পারেননি। তাতেও পড়ার প্রতি আগ্রহ হারাননি। বাণিজ্য বিভাগে স্কুলের সর্বাধিক নম্বর প্রাপক মিশুকে স্বভাবের মেয়েটিই। সোমাদের ঘরে অভাব। বাবা মনোরঞ্জন বর্মণ আনাজ বিক্রি করেন। মা লক্ষ্মী গৃহবধূ। দাদা রবীন্দ্র এবং দিদি বীণা ছোটখাট কাজ করেন। লকডাউনের সময় থেকে বীণার কাজ অবশ্য বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘বোন নিয়মিত স্কুলে যাওয়ারও ধকল নিতে পারে না। আর রক্ত কমে গেলে তো পড়াশোনার উপায়ও থাকে না। কিন্তু সব বাধাই বোন কাটিয়ে উঠেছে। শরীর সঙ্গ দিলে একদিন বোন ঠিক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবে।’’
লক্ষ্মী জানান, সোমার রক্তের গ্রুপ ‘এ নেগেটিভ’। এই গ্রুপের রক্ত সহজে মেলে না। ‘রমেশচন্দ্র দেব স্মৃতি রক্ষা সমিতি’ নামে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন রক্ত জোগাড়ে সাহায্য করে। এমনও হয়েছে কলকাতা থেকে কেউ এসে রক্ত দিয়েছেন সোমার জন্য। বীণা বলেন, ‘‘প্রতি বছর গরমের সময় রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। রক্ত পেতে মুশকিল হয়। এ বার লকডাউনেও খুব সমস্যা হয়েছে। ভাগ্যিস সংগঠনটা রয়েছে।’’ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নন্টু দেব জানান, সোমা অপেক্ষাকৃত জটিল ই’বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট সহ্য করেও মেয়েটা নিজের লক্ষ্যে অবিচল। অন্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য সোমা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘করোনা আবহে রক্তদান শিবির সেভাবে হচ্ছে না, এটাই চিন্তার। যে ভাবেই হোক সোমাদের জন্য রক্ত জোগান দিয়ে যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Rishra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE