লড়াকু: সোমা বর্মন। নিজস্ব িচত্র
শরীরে জটিল রোগের বাসা। পরীক্ষার ছ’দিন আগেও রক্ত নিতে হয়েছে। সংসারেও অনটন। তবে কোনও কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি মেয়েটাকে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম ডিভিশনে পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। শারীরিক ক্লেশ এবং পরিবারের অভাবকে হারিয়ে সে অনেক বড় হতে চায়।
মেয়েটির নাম সোমা বর্মন। হুগলির রিষড়া পঞ্চায়েতের কুমারডিঙি শান্তিগড়ে বাড়ি। তিন ভাইবোনের মধ্যে সোমা ছোট। বাবা মনোরঞ্জন বর্মন জানান, তিন বছর বয়সে তার থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়। প্রতি মাসে রক্ত নিতে হয়। রক্ত কমে গেলে শরীর দূর্বল হয়ে যায়। তখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় আরও সমস্যা। মা লক্ষ্মীদেবী জানান, মেয়ের রক্ত ‘এ নেগেটিভ’। সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে হাসপাতালে গিয়ে প্রায়ই ফিরে আসতে হয়। গরমে বিপাকে পড়তে হয় বেশি।
এত অসুবিধা সত্বেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বিন্দুমাত্র কমেনি সোমার। রিষড়ার মোড়পুকুরের শৈবালিনী দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যানিকেতন থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। রেজাল্টে জ্বলজ্বল করছে ৪৫১ নম্বর। ইতিহাসে লেটার। সোমার কথায়, ‘‘যত কষ্টই হোক, আরও পড়ব। কমার্সে ভর্তি হতে চাই।’’ পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকাও শেখে সে।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা রমেশচন্দ্র দেব স্মৃতি রক্ষা সমিতি নামে শ্রীরামপুরের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সোমা। সংগঠনের সদস্য নাসরিন বেগমের কথায়, ‘‘সোমা ই-বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই থ্যালাসেমিয়া তুলনায় বেশি জটিল। দমে না গিয়ে ও কিন্তু লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’’ নাসরিন জানান,
মনোরঞ্জন আনাজ বিক্রি করেন। মাস দু’য়েক ধরে অসুস্থতার জন্য কাজে যেতে পারছেন না। সোমার দাদা রবীন্দ্র এবং দিদি বীনা ছোট কাজ করেন। মাটির মেঝে আর টালির চালের ঘরে বসে অশক্ত শরীরে বইয়ের পাতায় মুখ রাখে সোমা। টালির ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে ঘর ভরিয়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy