ত্রুটি মিলেছিল আগেই। নিরাপত্তায় গাফিলতির কথাও জেনেছিল পুলিশ প্রশাসন।
হাওড়ার জয়পুরের পারবাকসির যে হোমটিতে চার প্রতিবন্ধী আবাসিক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এ বার সামনে এসেছে, দু’বছর আগেই পরিদর্শনের সময়ে তার ইঙ্গিত পেয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জেলায় প্রতিবন্ধী মহিলাদের হোম আছে তিনটি। দু’টি বেসরকারি, একটি সরকারি। বেসরকারি হোম দু’টির একটি হল পারবাকসিতে। অন্যটি উলুবেড়িয়ায়। সরকারি হোমটি লিলুয়ায়। প্রায় দু’বছর আগে পারবাকসির বেসরকারি হোমটিতে পরিদর্শনে যায় পুলিশ এবং আমতা-২ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তখনই কিছু ত্রুটি তাঁদের নজরে আসে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কী সেই ত্রুটি?
জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, প্রথমত, নিরাপত্তার অভাব। কোনও পাঁচিল ছিল না হোমটিতে। দ্বিতীয়ত, এখানে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড থেকে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে নাবালকদেরও রাখা হয়। এইসব নাবালকদের অবাধ যাতায়াত ছিল প্রতিবন্ধী কিশোরীদের জন্য নির্ধারিত ভবনগুলিতে। তৃতীয়ত, প্রতিবন্ধী কিশোরীদের নজরদারির ব্যবস্থাতেও ঘাটতি ছিল। তাদের দেখভালের জন্য পুরুষকর্মী থাকার কথা নয়। অথচ প্রতাপ প্রামাণিক নামে হোমের এক কর্মীর উপরেই তাদের দেখভালের ভার অনেকটাই বর্তেছিল। পরিদর্শনকারীরা জানিয়েছেন, নানা কারণে মহিলাদের যখন আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হত, তাঁদের সঙ্গে থাকত প্রতাপ (যৌন নির্যাতনের অভিযোগে যে তিন জনকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রতাপ রয়েছে)। তখনই তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। হোম থেকে অনেক কিশোরীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হোমটির যাবতীয় ত্রুটির কথা উল্লেখ করে সমাজকল্যাণ দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরে নজরদারি বাড়ানো হলে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠত না বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা হোমগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন করি। এই পরিদর্শনের ফলেই পারবাকসির হোমে যৌন নিগ্রহের ঘটনাটি সামনে এসেছে। এখন থেকে পরিদর্শন আরও বাড়ানো হবে।’’
বছর ছয়েক আগে হুগলির গুড়াপের একটি হোমে মাটি খুঁড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবতীর পচাগলা দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়েছিল রাজ্যে।
কলকাতা হাইকোর্ট হোমগুলিতে ঘন ঘন পরিদর্শনের নির্দেশ দেয় সরকারকে। কিন্তু তারপরেও নজরদারির গাফিলতিতে বিভিন্ন হোমের কর্তৃপক্ষ আবাসিকদের প্রতি অবহেলা করার সুযোগ পেয়ে যান বলে অভিযোগ।
পারবাকসির হোমটির কর্তারা অবশ্য নিরাপত্তা বা নজরদারির অভাবের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, হোমে মহিলাদের দেখভালের জন্য মহিলা কর্মীরাই থাকেন। পাঁচিলও রয়েছে। আবাসিক মহিলাদের যখন আদালতে পাঠানোর দরকার হয় তখন পুলিশই নিয়ে যায়। আবার হোমে ফিরিয়ে দিয়ে যায়।
মহিলাদের বাকি দু’টি হোম নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। তবে, পাঁচলা এবং বাগনানে ছেলেদের দু’টি হোমের ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটিতে আবাসিকদের পালানো, অন্যটিতে আবাসিকদের একইসঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা, পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থা ঠিক না-থাকার অভিযোগ উঠেছিল। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগনানের হোমের কর্তৃপক্ষকে সাবধানও করা হয়েছিল। দু’টি হোমের পক্ষ থেকেই অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy