সবুজে ঘেরা দ্বীপ নিয়ে আশ্বাস ছিল অনেক। তাই স্বপ্নও তৈরি হয়েছিল। শুরু হয়েছিল পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ। কিন্ত গত কয়েক বছরে সেই কাজ তেমন গতি পায়নি। হতাশ এলাকার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার হুগলির বলাগড়ে সবুজদ্বীপের হাল-হকিকত দেখে গেলেন রাজ্যের পর্টযন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলার আর এক মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তও। এতদিন যে বেসরকারি সংস্থা সেখানকার উন্নয়নে কাজ করছিল, তারা সন্তোষজনক কাজ না করায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন জানান গৌতমবাবু। তাঁর দাবি, বলাগড়কে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে, পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজ রাজ্য সরকার শুরু করেছে।
গঙ্গার উপর সবুজ দ্বীপকে একটি ইকো ট্যুরিজিম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই করছে রাজ্য সরকার। হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার সে কথা জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যেই ২০১৩ সালে সবুজদ্বীপে যাওয়ার কোরালা থেকে সোমড়ায় সংযোজক রাস্তা তৈরি করা হয়। তৈরি হয় সবুজদ্বীপ ও গঙ্গার উপর দু’টি জেটি। বিদ্যুৎ সংযোগও রয়েছে।
রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা ছিল, পিপিপি মডেলে সবুজ দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা। সেই অনুযায়ী কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার কথা রাজ্য সরকারের। প্রাথমিক ভাবে সরকার সেখানে পরিকাঠামো গড়ে দেবে— এমনই ছিল লক্ষ্য।
সেই অনুযায়ী কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সবুজদ্বীপে সেই সংস্থা রাত্রিবাসের জন্য মোট ১২টি কটেজ তৈরি করে। প্রতিটি কটেজে তিন-চার জন পর্যটক থাকতে পারবেন। অন্য কিছু কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বছর দেড়েক আগে সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপর থেকে সরকারি স্তরেও আর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বলাগড়ে ওই কাজ থমকে যাওয়ায় স্থানীয় এলাকার মানুষের মধ্যে সেখানে হতাশা তৈরি হয়।
এ দিন পর্যটনমন্ত্রী অবশ্য ফের আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সবুজ দ্বীপকে একটি স্বয়ং-সম্পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ আগ্রহী। সেই সম্ভবনাও সবুজ দ্বীপে রয়েছে। সার্বিক একটা পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। সে জন্যই আমি সবুজদ্বীপ দেখতে এলাম।’’
’৯০ দশকের প্রথম দিকে বলাগড়ে গঙ্গার উপর ওই দ্বীপটি জেগে ওঠে। প্রচুর গাছপালায় সবুজ ওই দ্বীপকে ঘিরে প্রথম থেকেই ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহ ছিল। বাম আমলে জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেখানে অস্থায়ী ভাবে ঘোরা এবং বনভোজনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে দ্বীপ শুধু শীতকালেই খুলে দেওয়া হত। গঙ্গায় ফেরিও থাকত শুধু শীতকালে। বছরের অন্য সময় মানুষের পা পড়ত না।
রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের পর, বলাগড়ের বিধায়ক অসীম মাঝি ওই দ্বীপকে কেন্দ্র করে যাতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে সেই চেষ্টা শুরু করেন। তিনি নিজেও খানিকটা হতাশ। তাঁর কথায়, ‘‘সবুজ দ্বীপে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সরকারের নানা স্তরে সে কথা বলে আসছি। কাজ শুরুও হল। কিন্তু সব মিলিয়ে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’
বলাগড়ে এ দিন পর্যটন মন্ত্রী আসায় ফের সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি নিজেও সে কথা এ দিন বলেন। এখন দেখার, হুগলিতে গঙ্গার উপর এই পর্যটন কেন্দ্র তৈরির কাজ কোনও পথে এগোয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy