Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

৫২৪ জন ছাত্রীর জন্য শিক্ষিকা মাত্র ৫

শিয়াখা‌লা থেকে জাঙ্গিপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এটাই একমাত্র মেয়েদের স্কুল। ১৮৫৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত কানাইলাল দে।

ফাঁকা: পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষক কম ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: দীপঙ্কর দে

ফাঁকা: পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষক কম ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রকাশ পাল
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

ক্লাসে বসে হট্টগোল জুড়েছে মেয়েরা। পাশের ঘর থেকে দিদিমণি এলেন। বীজগণিতের অঙ্ক কষতে দিয়ে আবার পাশের ক্লাসে চলে গেলেন।

এই স্কুলে এমনই দস্তুর। কারণ, শিক্ষিকার অভাব। বছরের পর বছর ধরে এমন ভাবেই চলে হুগলির ফুরফুরা পঞ্চায়েতের রামপাড়ায় নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়। বর্তমানে ছাত্রীসংখ্যা ৫২৪ জন। শিক্ষিকা ৫ জন। তার মধ্যে এক জন পার্শ্বশিক্ষিকা। বিজ্ঞা‌ন বিভাগের শিক্ষিকা নেই। নেই ইংরেজির শিক্ষিকা। প্রশাসনিক কাজ সামলে প্রধান শিক্ষিকা মাঝেমধ্যে ইংরেজি ক্লাস নেন। অথচ, অনুমোদিত শিক্ষক পদের সংখ্যা ১৪। শিক্ষিকার অভাবে ছাত্রীরা যে পিছিয়ে পড়ছে, তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরাও। কিন্তু উপায় নেই।

শিয়াখা‌লা থেকে জাঙ্গিপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এটাই একমাত্র মেয়েদের স্কুল। ১৮৫৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত কানাইলাল দে। প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া শুরু হয়, পরবর্তী তা পরিণত হয় জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। পিছিয়ে পড়া এই এলাকার স্কুলটিতে চলতি বছরে ৪২.৬৬% মুসলিম এবং ৪০.১৫% তফশিলি জাতিভুক্ত পরিবারের ছাত্রী রয়েছে। এক অভিভাবকের কথায়, “সংখ্যালঘু উন্নয়নের কথা শুনি। কিন্তু এখানে আমাদের মেয়েরা কতটা বঞ্চিত হচ্ছে, আমরাই জানি।” এক শিক্ষিকাও বলেন, “এখানে পড়ুয়াদের অধিকাংশই গরিব পরিবারের। অনেকে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। কেউ পঞ্চম শ্রেণিতেও নিজের নাম লিখতে পারে না। ওদের জন্য বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সম্ভব হয় না।” অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, বরাবরই পরিকাঠামোগত দিক থেকে স্কুলটি উপেক্ষিত। তাঁদেরই এক জন বলেন, “আমরা পড়াশোনা করিনি। তাই মেয়ে পড়াশোনা করে বড় হোক, এটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্ধেক ক্লাসই তো হয় না।” এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “সত্যিই ওই স্কুলে শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। একাধিক বার বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি। ফের চেষ্টা করব।”

জানা গেল, ক্লাসের কোনও রুটিন নেই। বিভিন্ন শ্রেণিতে একাধিক বিভাগ থাকলেও তাঁদের একসঙ্গে বসতে হয়। দশম শ্রেণির ফারহানা খাতুন‌, নাজমিন সুলতানারা অবশ্য শিক্ষিকারদের দোষ দিচ্ছে না। তাদের কথায়, “ক্লাস না হলে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। তবে দিদিমনিরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।” একই সুর প্রধান শিক্ষিকা মৃদুলা হালদারের গলায়। তিনি বলেন, “মেয়েদের সিলেবাস শেষ করতে সব শিক্ষিকাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু সংখ্যার খামতি ঢাকা যায় না। শিক্ষিকা নিয়োগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি।” শুধু যে শিক্ষিকা অপ্রতুল তাই নয়, করণিকের সংখ্যাও মাত্র এক জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই কোনও। শিক্ষিকাদেরই ক্লাসরুম খোলা বা বন্ধের কাজ করতে হয়। কখনও হাত লাগায় ছাত্রীরাই।

সম্প্রতি জাঙ্গিপাড়ার নিলারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতমকুমার বালির সৌজন্যে ওই স্কুলের কয়েক জন বৃত্তিমূলক পাঠক্রমের শিক্ষক মাঝেমধ্যে এই স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন। গৌতমবাবু বলেন, “আমি নিজেও দু’-এক দিন পড়িয়েছি। কিন্তু এতে স্থায়ী সমাধান হবে না।”

আর এই স্থায়ী সমাধানের অপেক্ষাতেই এখন দিন গুনছে নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education School Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE