Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদের জয়, ডিজে-র তাণ্ডব বন্ধ স্নানযাত্রায়

এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব শীতলা মায়ের স্নানযাত্রায় ডিজে-র তাণ্ডব নিয়ে অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতি বছর বিভীষিকাময় হয়ে উঠত শুধুমাত্র ডিজে-র দৌরাত্ম্যের জন্য। সকাল থেকে তীব্র শব্দে ওই পেল্লায় বক্স বাজানো শুধু যে যন্ত্রণাদায়ক ছিল তাই নয়, বহু মানুষ ওই শব্দে অসুস্থ বোধ করতেন।

বর্জন: অন্য বছরে শীতলা মায়ের স্নানযাত্রা উপলক্ষে বক্স বাজানোর এমন দৃশ্যই দেখা যেত হাওড়ার সালকিয়ায়। ফাইল চিত্র

বর্জন: অন্য বছরে শীতলা মায়ের স্নানযাত্রা উপলক্ষে বক্স বাজানোর এমন দৃশ্যই দেখা যেত হাওড়ার সালকিয়ায়। ফাইল চিত্র

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৩
Share: Save:

একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলে যে শেষ পর্যন্ত ফল মেলে, তা ফের প্রমাণ হল। গণ-প্রতিবাদের মুখে পড়ে এ বছর বন্ধ থাকল সালকিয়ার শীতলা মায়ের স্নানযাত্রায় ডিজে-র তাণ্ডব।

এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব শীতলা মায়ের স্নানযাত্রায় ডিজে-র তাণ্ডব নিয়ে অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতি বছর বিভীষিকাময় হয়ে উঠত শুধুমাত্র ডিজে-র দৌরাত্ম্যের জন্য। সকাল থেকে তীব্র শব্দে ওই পেল্লায় বক্স বাজানো শুধু যে যন্ত্রণাদায়ক ছিল তাই নয়, বহু মানুষ ওই শব্দে অসুস্থ বোধ করতেন।

এই শব্দাসুরের বিরুদ্ধে এ বার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে একাধিক সাংস্কৃতিক সংস্থা ও ব্যবসায়ী সংগঠন। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে আলাদা আলাদা ভাবে চিঠি দিয়েছিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ দফতর— সর্বত্র। সব চেয়ে বড় কথা, ডিজে বন্ধ করতে এগিয়ে এসেছিলেন শীতলা মায়ের স্নানযাত্রার অন্যতম সংগঠক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ও উত্তর হাওড়ার জেলা সভাপতি গৌতম চৌধুরী নিজে। অভিযোগ ছিল, গৌতমবাবুর ওয়ার্ডেই বেশি ডিজে বাজত। এলাকাবাসীর বক্তব্য, অন্যান্যবার তিনি ডিজে আটকানোর চেষ্টা না করলেও চলতি বছরে সরব হন।

এ দিন গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমরা পেরেছি। স্নানযাত্রায় ডিজে তো দূর, মাইক পর্যন্ত বাজতে দেওয়া হয়নি। মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষাও নির্বিঘ্নে মিটেছে।’’ ডিজে বন্ধ থাকায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। এক ব্যবসায়ী পার্থ মাজি বলেন, ‘‘এ বছর মায়ের স্নানের দিনে মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। সবাই একজোট হয়ে প্রতিবাদ করায় কাজ হয়েছে। সংগঠকেরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষের দাবি মেনে নিয়েছেন।’’

প্রতি বছরের মতো এ বছরও সোমবার স্নানযাত্রা উপলক্ষে লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম হয়েছিল সালকিয়ায়। ভিড়ের চাপে বিকেল চারটের পর থেকে উত্তর হাওড়া কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ বছর স্নানযাত্রার দিনে অঙ্ক পরীক্ষা পড়ায় পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাই প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন ডিজে-র তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পরিবেশ দফতরের নির্দিষ্ট করে দেওয়া শব্দমাত্রা ছাপিয়ে কয়েক গুণ জোরে বাজত বক্স। কিন্তু দেখা মিলত না পুলিশ বা পরিবেশ দফতরের আধিকারিকদের। কিন্তু এ বার পুরো ব্যবস্থাই বদলে যায় পুলিশের সক্রিয়তার জন্য।

চলতি মাসের প্রথমেই হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়েছিলেন, স্নানযাত্রায় কোনও ভাবেই ডিজে বাজতে দেওয়া হবে না। বাজালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ কমিশনারের ওই কড়া বার্তা সমন্বয় বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সংগঠক ও এলাকার বাসিন্দাদের। তার পরেও ওই বৈঠকে উপস্তিত সংগঠকদের একাংশ বক্সের বদলে মাইক লাগাতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি।

হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, এ দিন মাধ্যমিকের জন্য কোথাও মাইকের চোঙা বাঁধতে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া ও ছুটির পরে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছনোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডিসি (উত্তর হাওড়া) অমিত রাঠোর বলেন, ‘‘আমরা আগেই সংগঠকদের জানিয়ে দিয়েছিলাম, ডিজে বাজানো চলবে না। তাই এ দিন ডিজে বাজানি। শুধু পুলিশকে বিভিন্ন প্রয়‌োজনীয় তথ্য মানুষকে জানানোর জন্য মাইক ব্যবহার করতে হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salkia DJ সালকিয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE