Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

টোটোয় টক্কর, তোলার নালিশে বিদ্ধ নেতা

কোন ব্যাঙ্কে সেই টাকা থাকে বাদশা তা বলতে পারেননি। কমিটিতে জমানো টাকা ব্যাঙ্ক পর্যন্ত যায় কিনা, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি বাদশা অনুগামী টোটো-চালকেরাও।

তাণ্ডব: তৃণমূল নেতা বাদশা আলমের নেতৃত্বে লাঠি নিয়ে টোটো-চালকদের বিক্ষোভ। বুধবার পান্ডুয়া জিটি রোডে

তাণ্ডব: তৃণমূল নেতা বাদশা আলমের নেতৃত্বে লাঠি নিয়ে টোটো-চালকদের বিক্ষোভ। বুধবার পান্ডুয়া জিটি রোডে

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০১:০৩
Share: Save:

তোলাবাজির অভিযোগ— তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এ বার টোটো-চালকদের সংগঠন গড়ে তাঁদের থেকেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল পান্ডুয়ায়। বিরক্ত টোটো-চালকেরা অন্য সংগঠনে যোগ দেওয়ায় অশান্তি ছড়াল বুধবার।

লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রাস্তা দাপালেন হাজারখানেক টোটো-চালক। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ব্যস্ত সময়ে বন্ধ থাকল জিটি রোড। ব্লক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে মারমুখী টোটো-চালকদের দেখে দোকানের ঝাঁপ নামালেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টোটো চালকদের জন্য তৃণমূলের দু’টি সংগঠন রয়েছে। একটি পুরনো— টোটো রিকশা শ্রমিক ওয়েলফেয়ার সমিতি। তার সভাপতি ব্লক তৃণমূলের নেতা বাদশা আলম। বাদশা এ বার পান্ডুয়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি আর একটি ইউনিয়ন খোলা হয়েছে— ‘তৃণমূল অসংগঠিত শ্রমিক সংগঠন’ নাম দিয়ে। এই সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ নুর ইসলাম। আগে বাদশার আধিপত্য ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেখানে ভাঙন ধরেছে। টোটো-চালকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেন বাদশা। তাই অনেকেই নতুন সংগঠনে নাম লেখাতে শুরু করেছেন। বাদশার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখও খুলছিলেন তাঁরা।

এলাকায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টোটো। নিজস্ব চিত্র।

তারই পাল্টা হিসাবে এ দিন সকাল থেকেই টোটো বন্ধ রেখে বাদশা আলমের নেতৃত্বে প্রায় ৯০০ টোটো-চালক লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে এগোতে থাকেন পান্ডুয়া রেলগেটের দিকে। সেখানেই তৃণমূল অসংগঠিত শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়। বন্ধ হয়ে যায় জিটি রোড। খবর যায় পুলিশে। তেলিপাড়ার কাছে পুলিশ বাহিনী আটকে দেয় ওই টোটো চালকদের। ফলে, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

খবর যায় এলাকার দায়িত্বে থাকা ধনেখালির বিধায়ক তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্রের কাছেও। তাঁর হস্তক্ষেপেই এ দিনের মতো সংঘর্ষ থামানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন টোটো-চালকেরা। অসীমা বলেন, ‘‘টোটো নিয়ে একটা ঝামেলা হচ্ছে। ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করব। সব সমস্যা মিটে যাবে।’’

টোটো-চালকদের একাংশের অভিযোগ, সংগঠনের নামে তোলাবাজি করেন বাদশা আলম। তাঁদের দাবি, এলাকায় টোটো নামাতে গেলে এককালীন মোটা টাকা গুনতে হয়। তারপর প্রতিদিন দিতে হয় ১০ টাকা করে। রীতিমতো বিল ছাপিয়ে ১০ টাকা করে নেন তিনি।

এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘ঋণ নিয়ে টোটো কিনেছি। এখন পড়েছি মহা বিপদে।
আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।’’ অকারণে তাঁদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। আর এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি। মিটিং, মিছিল হলে রোজগার বন্ধ রেখে যোগ দিই। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। তোলাবাজি চলছেই।’’ বাদশার পক্ষ থেকে নুর ইসলামের পক্ষে নাম লেখানো আর এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে অত্যাচার সহ্য করছি। আর পারছি না। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাই বিরুদ্ধ সংগঠনের নাম লিখিয়েছি।’’

শেখ নুর ইসলাম বলেন, ‘‘অন্যায় ভাবে টাকা নিচ্ছেন বাদশা। আমি দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ করছি। মন্ত্রীকে জানিয়েছি, থানাতেও জানিয়েছি মৌখিক ভাবে। মঙ্গলবার রাতে এ নিয়ে বাদশার সঙ্গে বচসা হয়।’’

এ দিন কী কারণে পথে নামলেন বাদশা? এর কোনও জবাব দেননি ওই তৃণমূল নেতা। তবে, তাঁর অনুগামী এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের সদস্যদের ওরা ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। জোর করে কয়েকজনকে আটকে রাখছে। তারই প্রতিবাদে ওদের কার্যালয় অভিযানের কথা ছিল।’’

টাকা তোলার অভিযোগ মানেননি বাদশা। তাঁর দাবি, ‘‘টোটো-চালকেরা নিজেদের জন্য একটি কমিটি করে টাকা রাখেন। তার পরে সেই টাকা ব্যাঙ্কে রাখা হয়। কোনও টোটো-চালক বা তাঁর পরিবারের বিপদে ওই টাকা কাজে লাগে। টাকা পয়সার ব্যাপারে আমি নেই।’’

তবে, কোন ব্যাঙ্কে সেই টাকা থাকে বাদশা তা বলতে পারেননি। কমিটিতে জমানো টাকা ব্যাঙ্ক পর্যন্ত যায় কিনা, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি বাদশা অনুগামী টোটো-চালকেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TOTO Pandua TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE