Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ধনেখালিতে বেআব্রু শাসকের কোন্দল

পুলিশের পা ধরে বিচার প্রার্থনা আক্রান্তের স্ত্রীর

প্রহৃত নেতার স্ত্রী শিপ্রা বেরা বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ সাঁতরা, চিত্তরঞ্জন সাঁতরা, বিশ্বজিৎ সাঁতরা-সহ পনেরো জনের নামে ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক পুলিশ অফিসারের পা ধরে বিচার চাইতে থাকেন তিনি। শিপ্রাদেবী বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকে স্বামীকে হুমকি দিচ্ছি‌ল নিত্যানন্দরা। ওরাই স্বামীকে মেরেছে। ওদের শাস্তি চাই।’’

আবেদন: পুলিশের পা ধরে আক্রান্তের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

আবেদন: পুলিশের পা ধরে আক্রান্তের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
ধনেখালি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

ধনেখালির গোপীনাথপুর-২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান তথা এ বারের জয়ী তৃণমূল সদস্য মৃত্যুঞ্জয় বেরাকে মারের ঘটনায় দলেরই স্থানীয় নেতাদের নাম জড়াল। যার জেরে এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়ল।

প্রহৃত নেতার স্ত্রী শিপ্রা বেরা বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ সাঁতরা, চিত্তরঞ্জন সাঁতরা, বিশ্বজিৎ সাঁতরা-সহ পনেরো জনের নামে ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক পুলিশ অফিসারের পা ধরে বিচার চাইতে থাকেন তিনি। শিপ্রাদেবী বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকে স্বামীকে হুমকি দিচ্ছি‌ল নিত্যানন্দরা। ওরাই স্বামীকে মেরেছে। ওদের শাস্তি চাই।’’

মৃত্যুঞ্জয়ের মতো নিত্যানন্দও ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছেন। তিনি এবং চিত্তরঞ্জন দুই ভাই। বিশ্বজিত নিত্যানন্দের ছেলে। অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। প্রহৃতের অবস্থা এতটাই জটিল যে, তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ব্লক অফিস থেকে বৈঠক সেরে মোটরবাইকে ফেরার পথে কামরুল এলাকায় আক্রান্ত হন মৃত্যুঞ্জয়। মেরে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। মাথাতেও আঘাত করা হয়। বর্তমানে তিনি কলকাতারএকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্কট কাটেনি বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার মৃত্যুঞ্জয়ের অনুগামীরা চৌতারা বাজারে বন্‌ধ ডাকেন। ওই এলাকায় সব দোকানপাট এ দিন কার্যত বন্ধ ছিল। সকাল ৮টা নাগাদ চৌতারা মোড়ে তারকেশ্বর-বর্ধমান রোড অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। ঘণ্টা তিনেক অবরোধ চলে।

কেন ওই হামলা?

শাসক শিবির থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাই উঠে আসছে। ওই পঞ্চায়েতের ন’টি আসনেই এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় শাসকদল। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, ওই এলাকায় মৃত্যুঞ্জয় এবং নিত্যানন্দরা আড়াআড়ি ভাবে দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত। অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলাতে দলের নেতারা দু’পক্ষের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে দেন। সেই সমীকরণ অনুযায়ী মৃত্যুঞ্জয় গোষ্ঠী পাঁচটি আসন পায়। চারটি পান নিত্যানন্দরা। পঞ্চায়েতের নতুন বোর্ডে কাদের প্রাধান্য থাকবে, তা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়। তার জেরেই ওই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে দলেরই একাংশ মনে করছে।

রাখঢাক না-করে তৃণমূল নেতা রামেন্দু সিংহরায় বলেন, ‘‘আমাদের দলেরই কিছু দুষ্কৃতী এ কাজ করেছে। মৃত্যুঞ্জয় পঞ্চায়েতের গুরুতপূর্ণ পদের দাবিদার বলেই এই হামলা।’’ স্থানীয় রাজনীতিতে মৃত্যুঞ্জয় রামেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নিত্যানন্দ ব্লকের অপর নেতা মুন্সি সাকায়েত হোসেনের অনুগামী বলে পরিচিত। সাকায়েতের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘নিন্দনীয় ঘটনা। তবে কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে আমি নেই। কারা ওই ঘটনা ঘটাল, বলতে পারব না।’’ এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের দলে কোনও স্থান নেই। দোষীরা শাস্তি পাক। পুলিশকে সেটাই বলা হয়েছে।’’

২০০৮ থেকে ’১৩ সাল পর্যন্ত ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন চিত্তরঞ্জন সাঁতরা। উপপ্রধান ছিলেন সোমা সাঁতরা। সোমা ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী। পরে তাঁর সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের বিয়ে হয়। পরে মৃত্যুঞ্জয়ও ফের বিয়ে করেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও শত্রুতা তৈরি হয় কি না এবং হামলার ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে। সোমা কোনও মন্তব্য করেননি। অভিযুক্তদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE