Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

থানায় ঢুকে পুলিশকে চড় তৃণমূল নেতার

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

ভিড়: থানায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র

ভিড়: থানায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

থানায় ঢুকে তৃণমূল নেতার দাবি, অপহরণে অভিযুক্তকে ছাড়তে হবে। আপত্তি জানানোয় পুলিশকে সপাটে চড়!

বছর চারেক আগে কখনও কলকাতার আলিপুর, কখনও শ্যামপুকুর, আবার কখনও বীরভূমের বোলপুরে থানায় ঢুকে শাসক দলের লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর, নিগ্রহ এবং ভাঙচুরের অভিযোগ উঠতে থাকায় রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এই ক’বছরে তেমন অভিযোগ আর সে ভাবে শোনা যায়নি। রবিবার ফের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশকে চড় মারার অভিযোগ উঠল হাওড়ার পাঁচলা থানায়।

পুলিশের ‘অপরাধ’?

পাঁচলা থানার পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, শনিবার শুভরআড়া পঞ্চায়েতের মল্লিকবাগান এলাকা থেকে এক নাবালিকাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লক্ষ্মীকান্ত দাস নামে এক যুবক বিয়ে করে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। রবিবার দুপুরে দু’জনকে উদ্ধার করে আনা হয়। গ্রেফতার করা হয় লক্ষ্মীকান্তকে। সন্ধ্যায় লক্ষ্মীকান্ত এবং ওই নাবালিকাকে ফেরত আনতে যান ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য অমিত দাস এবং তাঁর ভাই অনিল। অনিলও তৃণমূল কর্মী। বাইরে ছিলেন ওই দলের আরও কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। পুলিশ নাবালিকা ও ধৃত যুবককে ছাড়তে আপত্তি জানায়। তাদের আদালতে হাজির করানোর কথা বলে। দু’পক্ষের বচসা হয়। তারপরেই নাবালিকা ও লক্ষ্মীকান্তকে থানা থেকে অমিত এবং তাঁর ভাই জোর করে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বাধা দেন এএসআই গৌরাঙ্গ মণ্ডল। এই ‘অপরাধে’ অমিত তাঁকে চড় মারেন বলে অভিযোগ।

গৌরাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘নাবালিকা অপহরণের অভিযোগ ওঠায় পঞ্চায়েতের সহযোগিতা চেয়েছিলাম শুধু। অমিতবাবুকে বুঝিয়েছি, এ ভাবে থানা থেকে কোনও অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়া যায় না। উনি কোনও কথা শুনতে চাইছিলেন না। জোর করছিলেন। শেষে আমাকে চড় মেরে ভাইকে নিয়ে ছুটে থানা থেকে বেরিয়ে যান।’’ অভিযোগ নিয়ে অমিতের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। সোমবার তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁরা পলাতক। খোঁজ চলছে। ওই নাবালিকা এবং লক্ষ্মীকান্তকে সোমবার হাওড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক নাবালিকাকে হাওড়ার একটি হোমে পাঠানো এবং লক্ষ্মীকান্তকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ নিগ্রহের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায়।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বারেবারেই দলীয় নেতাকর্মীদের পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন। তারপরেও এ বার পাঁচলায় পুলিশ নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায় তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। একই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তাঁরা। বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য ভবানীপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে কাজ করছে। তাই রাজ্যের সর্বত্র মার খাচ্ছে। পুলিশ নিজেরা না শোধরালে মার খেতেই থাকবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল সর্বত্র পুলিশকে ভয় দেখায়। প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিক। পাঁচলায় যিনি পুলিশকে মেরেছেন, তাঁর সদস্যপদ খারিজ করা হোক।’’

পাঁচলার তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধেই পাল্টা অমিতকে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন। পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশন মল্লিকের দাবি, ‘‘পুলিশই অমিত ও তাঁর ভাইকে মারধর করেছে। পুলিশের মারে ওঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ বাঁচার জন্য নাটক করছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঁরা অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। পুলিশ নেয়নি।’’ পুলিশ মারধরের অভিযোগ মানেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Panchla পাঁচলা West Bengal Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE