Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফোনটা তুলতেই কেঁপে উঠল বুক

কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও তাঁর ঘোর কাটেনি। মিন্টো পার্কের বেসরকারি হাসপাতালের সাততলায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সামনে বসে তখন কেবল অপেক্ষা।

শনিবার সকালে গ্রামে পুলিশি টহল। ছবি: সুব্রত জানা

শনিবার সকালে গ্রামে পুলিশি টহল। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

রাত তিনটে নাগাদ হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইল ফোন! ঘুম চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে পরিচিত নম্বরও যেন তখন আবছা লাগছে। কিন্তু মোবাইল কানে তুলতেই ঝিমঝিম করতে শুরু করল মাথা। কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পরেও যেন ঘোর কাটছিল না। বারো বছরের ছেলেটা পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। কী বলে যে তাকে জাগাবে, বুঝতেই পারছিলেন না হাওড়ার শ্যামপুর থানার ওসি সুমন দাসের স্ত্রী সুমিতাদেবী।

কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও তাঁর ঘোর কাটেনি। মিন্টো পার্কের বেসরকারি হাসপাতালের সাততলায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সামনে বসে তখন কেবল অপেক্ষা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষণ না করে কোনও মন্তব্যই করা যাবে না। মায়ের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলেটাকে কী ভাবে সামলাবেন! তার মধ্যেই তিনি জানালেন, শুক্রবার ফোনে একাধিক বার স্বামীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। দুর্ঘটনার আগে সুমনবাবু পুলিশ কোয়ার্টার্সেই ছিলেন। রাতের খাবার খাওয়ার পরে শেষ বার ফোনে কথা হয় তাঁদের। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁকে আবার বেরোতে হতে পারে। ভোরে ফোন বাজায় ভেবেছিলেন হয়তো সুমনবাবু কোয়ার্টার্সে ফিরে তাঁকে জানাচ্ছেন। কিন্তু ফোন তুলতেই শুনতে হল, জমি বিবাদ মেটাতে গিয়ে সুমনবাবু মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন। সেই খবরটা যেন এখনও তাঁর কাছে দুঃস্বপ্ন।

সুমিতাদেবী জানান, কাজের সুবিধার জন্য সুমনবাবু শ্যামপুরের পুলিশ কোয়ার্টার্সে থাকেন। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে সুমিতাদেবী বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে বাড়িতে থাকেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শেষ কথা হয়েছিল যখন ও কোয়ার্টার্সে ছিল। রাতে ফোনে জানাল, ওকে ফের বেরোতে হবে। তার পরে কী ভাবে যে কী হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

এ দিন মিন্টো পার্কের ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সুমনবাবুর মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। প্রাথমিক পর্বের শারীরিক পরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, ধারাল কিছু দিয়েই তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আঘাত এতটাই মারাত্মক যে স্টিচ করাও মুশকিল! চামড়া, মাংস প্রায় নেই। কিন্তু খুলিতে তেমন কোনও চোট নেই। ফলে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে বড় কোনও ক্ষতি হবে না বলেই আশা রাখছি।’’ হাসপাতালের এক কর্তা জানান, ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রেখে সুমনবাবুর চিকিৎসা চলছে। ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে না করে কিছুই বোঝা যাবে না। ন’সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান স্নায়ুরোগ চিকিৎসক সমীন্দ্রনাথ ঘোষ। এখনও কোনও অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয়নি। তবে পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায় এ দিন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে ফোন করে সুমিতাদেবীকে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুমনবাবুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur Police Howrah শ্যামপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE