Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জাহাজি ঢেউয়ে আতঙ্ক উলুবেড়িয়ায়

হুগলি নদী দিয়ে জাহাজ গেলেই ঢেউ এসে ধাক্কা মারছে উলুবেড়িয়া মহকুমার বিভিন্ন নদীবাঁধে। আর তার জেরে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের ক্ষতি নিয়ে প্রমাদ গুনছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। চিন্তায় সেচ দফতরও

বিপদ: ক্রমাগত ধসে যাচ্ছে উলুবেড়িয়ার নদী পাড়। বিপজ্জনক ভাঙন আটকাতে হিমসিম প্রশাসন। ছবি: সুব্রত জানা

বিপদ: ক্রমাগত ধসে যাচ্ছে উলুবেড়িয়ার নদী পাড়। বিপজ্জনক ভাঙন আটকাতে হিমসিম প্রশাসন। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

ভয়ের কারণ জাহাজের ধাক্কায় তৈরি হওয় ঢেউ!

হুগলি নদী দিয়ে জাহাজ গেলেই ঢেউ এসে ধাক্কা মারছে উলুবেড়িয়া মহকুমার বিভিন্ন নদীবাঁধে। আর তার জেরে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের ক্ষতি নিয়ে প্রমাদ গুনছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। চিন্তায় সেচ দফতরও। বাঁধের ক্ষতি মেরামতের জন্য তারা টাকা বরাদ্দ করছে ঠিকই। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। গত বছর রাজগঞ্জের নদীবাঁধে ভাঙন এবং বাউড়িয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধে ধসের পিছনে জাহাজের ঢেউকেই দুষছে সেচ দফতর। আর এই ঢেউ রোধে সেচ দফতরের দাওয়াই— ড্রেজিং।

কিন্তু ড্রেজিং হচ্ছে না কেন?

সেচ দফতরের কর্তাদের দাবি, ড্রেজিংয়ের খরচ অনেক বেশি। তা রাজ্য সরকারের পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় জাহাজ পরিবহণ দফতর। যে হেতু জাহাজ চলাচলের জন্যই নদীবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে তাই কেন্দ্রকেই ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। দীর্ঘদিন এই এলাকায় হুগলি নদীতে ড্রেজিং হয়নি। ফলে, পলি পড়ে নদীর নাব্যতা কমে গিয়েছে। সেই কারণের জাহাজ চলাচলের সময়ে বড় ঢেউ তৈরি হচ্ছে।

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে একাধিকবার কেন্দ্রীয় জাহাজ পরিবহণ দফতর এবং কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ। বর্তমান সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রেরও অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে বার বার হুগলি নদীতে ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সব রকম সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও উত্তর আসেনি।’’

বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, ‘‘উলুবেড়িয়ায় গঙ্গার পাড়ের কাছাকাছি ‘ডিপ ওয়াটার চ্যানেল’ রয়েছে। তাই সেখান দিয়ে জাহাজ গেলে পাড়ের কাছে অভিঘাত হতে পারে। কিন্তু অন্যত্র হওয়ার কথা নয়।’’ বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ড্রেজিংয়ের বিষয়টি তাঁদের দেখার কথা নয়। এ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রক।

কলকাতা বন্দরে যাতায়াতের পথে গাদিয়াড়া পর্যন্ত হুগলি নদী অতিক্রম করতে হয় জাহাজগুলিকে। জাহাজগুলি হাওড়া ঘেঁষে চলাচল করে। তার জেরে বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। সেগুলি সরাসরি ধাক্কা মারে নদীবাঁধে। এর ফলে সাঁকরাইলের রাজগঞ্জ, বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল, উলুবেড়িয়ার শতমুখী শ্মশান, জগদীশপুর প্রভৃতি এলাকায় নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর।

এক সময়ে নদীর উল্টো পাড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ঘেঁষে জাহাজগুলি চলাচল করত। কিন্তু বজবজের দিকে নদীতে পলি পড়ছে। এইসব এলাকায় কয়েকটি জাহাজডুবিও হয়েছে। সেই সব জাহাজের ভগ্নাংশ তোলা হয়নি। সেই সব কারণে বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিক দিয়ে আর জাহাজগুলি চলাচল করে না বলে সেচ দফতর জানিয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নদী ভাঙনের আশঙ্কার কথাও উঠে এসেছে। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামত করেও তো রেহাই মিলছে না। জাহাজগুলি হাওড়ার দিক ঘেঁষে চলাচল করার ফলে ভবিষ্যতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গা ভাঙনের মত উলুবেড়িয়ার বিস্তীর্ণ অংশও হুগলি নদীর ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River Dredging River Bank Ship Wave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE