Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আত্মপ্রকাশ উলুবেড়িয়ার গাঁ-গঞ্জের ইতিহাসের

বহু ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে উলুবেড়িয়ার মহকুমা জুড়ে গাঁ-গঞ্জের অলি-গলিতে। বেশিরভাগই রয়েছে মানুষের স্মৃতিতে। সেই সব ইতিহাস ছাপার অক্ষরে আনার কাজ শুরু করল উলুবেড়িয়া মহকুমা সংস্কৃতি পরিষদ।

স্মরণীয়: বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র

স্মরণীয়: বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
জয়পুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

এ-ও এক ইতিহাসের খনি!

প্রায় ৭০ বছর আগে আমতা-২ ব্লকের তাজপুর গ্রামে যে একজন ‘ঘোড়া ডাক্তার’ ছিলেন, ক’জন জানতেন? ঘোড়ার ডাক্তার নন কিন্তু। সাধন চক্রবর্তী নামে ওই হাতুড়ে চিকিৎসক ঘোড়ায় চড়ে নিজের ‘চেম্বার’ এবং গ্রামের রোগীদের বাড়ি যেতেন। তাই ওই নাম!

এই ব্লকেরই জয়পুরের খালনার গোপীনাথ রায় ১৯১৯ সালে গ্রামে শিক্ষা প্রসারের জন্য বাবা রাধাগোবিন্দের নামে তৈরি করলেন হাইস্কুল। প্রায় ১২ বছর সরকারের অনুমোদন পায়নি স্কুলটি। সেই সময়ে নিজের পকেট থেকে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছেন তৎকালীন আয়কর দফতরের কর্মী গোপীনাথবাবু। সেই স্কুল শতবর্ষ পার করে রমরমিয়ে চলছে। এ তথ্যও জানা নেই অনেকের।

আরও চমকে দেওয়ার মতো তথ্য—৭০-৮০ বছর আগে সারদা বা আশপাশের গ্রামে কখনও ডাকাতি হতো না! জাঁদরেল পুলিশ অফিসার বা ডাকসাইট পালোয়ানের ভয়ে নয়, আসলে সারদায় বাস করতেন ওসমান খান নামে এক কুখ্যাত ডাকাত। তার ভয়েই সারদা-সহ আশপাশের গ্রামে অন্য ডাকাতরা ঘেঁষতে সাহস পেত না!

শুধু ওই ব্লকই নয়, এমনই বহু ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে উলুবেড়িয়ার মহকুমা জুড়ে গাঁ-গঞ্জের অলি-গলিতে। বেশিরভাগই রয়েছে মানুষের স্মৃতিতে। সেই সব ইতিহাস ছাপার অক্ষরে আনার কাজ শুরু করল উলুবেড়িয়া মহকুমা সংস্কৃতি পরিষদ। শনিবার মহালয়ার দিনে জয়পুর মহাসঙ্ঘের সেমিনার হলে তারা প্রকাশ করল ‘উলুবেড়িয়ার শত গাঁয়ের পেটের কথা’ শীর্ষক বইটি। উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং বাচিক-শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।

প্রথমে ঠিক হয়েছিল, আমতা-২ ব্লকের ১০০টি গ্রামের ইতিহাস বইয়ে থাকবে। কাজ শুরু হলে দেখা যায়, অনেকের লেখাই নির্দিষ্ট মানে পৌঁছয়নি। ফলে, লেখাগুলি বাতিল হয়। তাই প্রথম পর্যায়ে ৫০টি গ্রামের ইতিহাস বইটিতে স্থান পেয়েছে। সংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক বঙ্কিম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাঁদের লেখা অমনোনীত হয়েছে, তাঁদের আবার গ্রামে গিয়ে নতুন করে কাজ করতে বলেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা সেগুলি প্রকাশ করব। মহকুমার ন’টি ব্লকের ইতিহাসই পরিষদের উদ্যোগে প্রকাশ করা হবে।’’

মাসছয়েক আগে কাজ শুরু হয়। লেখক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ১০০ জনকে। তাঁদের কেউ শিক্ষক, কেউ সমাজসেবী, কবি বা গল্পকার। তাঁদের নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় একদিনের একটি কর্মশালা হয়। এরপরেই তাঁরা কাজে নেমে পড়েন। তুলে আনেন বিভিন্ন গ্রামের বহু অজানা তথ্য। এই কাজ করতে গিয়ে জানা যায়, খড়িয়প গ্রামের হরিদাস কাব্যতীর্থ নামে এক প্রবীণ লেখকের কথা। যিনি ১০০ বছর আগে ২০-২৫ পাতার ‘খোড়পের ইতিহাস’ লেখেন। এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পরে ‘খড়িয়প বার্তা’ নামে সংবাদপত্রও প্রকাশ করতেন।

মহকুমা সংস্কৃতি পরিষদ গড়ে উঠেছিল প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের উৎসাহে। পরিষদ প্রতি বছর বিভিন্ন বিষয়ে বই প্রকাশ করে। বঙ্কিমবাবু জানান, প্রয়াত সাংসদের প্রস্তাব এবং উৎসাহেই এই কাজ করা সম্ভব হয়েছে। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘আমি পরিষদকে বলেছিলাম, কাজটি করা হোক। সহায়তা করব। এই বই আমাদের ব্লকে একটা স্থায়ী দলিল হয়ে থাকবে।’’

গ্রাম থেকে ইতিাসের তথ্য তুলে এনে মলাটবন্দি করতে পেরে খুশি লেখকেরাও। তাঁদের মধ্যে দীপঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘এক-একটি গ্রামে তিন-চার বার করে গিয়েছি। প্রবীণেরা যা বলেছেন, তা অন্যদের সঙ্গে কথা বলে, প্রমাণ দেখে মিলিয়ে নিয়েছি। একটা অনন্য অভিজ্ঞতা।’’ প্রদীপ চক্রবর্তী নামে আর এক লেখক বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য গ্রামের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা হয়ে গিয়েছিল। রান্নাপুজোতেও নিমন্ত্রণ পেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

History Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE