যোদ্ধা: মা-বোনের সঙ্গে অঙ্কিতা। নিজস্ব চিত্র
বাবা চায়ের দোকান চালাতেন। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর দোকানের ভার এসে বড় মেয়ের ওপর। চায়ের দোকান সামলেই সেই মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পেল ৪৩২। উলুবেড়িয়ার জগৎপুরের বাসিন্দা, জগৎপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অঙ্কিতা আদক লেটার পেয়েছে সব ক’টি বিষয়েই।
গত বছর ২০শে এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অঙ্কিতার বাবা জয়ন্তবাবুর। অঙ্কিতার তখন একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। বাবার পরলৌকিক কাজকর্মের মধ্যেই কোনওরকমে পরীক্ষা শেষ করে সে। জয়ন্তবাবু একটা চায়ের দোকান চালাতেন। স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। সব খরচ চলত সেই দোকানের আয়ের টাকাতেই। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর দোকান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সংসারের খরচ সামলাতে বড় মেয়ে অঙ্কিতাই তখন দোকানের দায়িত্ব নেয়।
অঙ্কিতা জানায়, সেই সময় পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিল সে। কিন্তু একাদশ শ্রেণির ফল ভাল হওয়ায়, শিক্ষকদের উৎসাহে দোকান চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যায়। সকালে উঠে রোজ দোকান খুলত অঙ্কিতা। এক দফা চা বিক্রি করে স্কুলে যেত। স্কুল ছুটির পর আবার আসত দোকানে। দোকান চালাতে চালাতেই চলত পড়াশোনা। গ্রামের তিন শিক্ষকের কাছে পড়ত অঙ্কিতা। সেটাও দোকান চালানোর ফাঁকে।
সোমবার স্কুল থেকে রেজাল্ট নিয়ে দোকানে এসে বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলাতে পারেনি অঙ্কিতা। কেঁদে ফেলে হাউহাউ করে। তাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন মা মানসী আদক এবং বোন অন্বেষাও। তবে দ্রুত সেই আবেগ সামলে আবার কাজে ফেরে অঙ্কিতা। দোকানে তখন অনেক খরিদ্দার। তাঁদের চা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সদ্য ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মেয়ে।
অঙ্কিতা জানায়, দোকান থেকে দিনে আয় হয় শ’খানেক টাকা। সেই টাকায় কোনওরকমে চলে সংসার খরচ। এরপর পড়াশোনা কীভাবে চলবে, সেটাই আপাতত প্রধান চিন্তা তার। মা মানসী আদক বলেন, ‘‘ওর বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়েদের ভাল করে পড়াশোনা করাবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণের আগে উনি চলে গেলেন। মেয়েটা নিজে খেটে এত ভাল রেজাল্ট করল। কিন্তু জানিনা এরপর কী হবে! ভেবে পাচ্ছি না কীভাবে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করবো!’’
ভবিষ্যতে আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা অঙ্কিতার। তার কথায়, ‘‘টাকার অভাবে ঘরটা মেরামত পর্যন্ত করতে পারিনি। টালির চাল ভেঙে যাওয়ায় প্লাস্টিক চাপিয়ে কোনওরকমে চলছে। জানিনা কী ভাবে কী হবে। তবে যেমন করে হোক পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের অভাব মেটাব। বোনকেও পড়াশোনা করাতে হবে। বাবার ইচ্ছা আমি পূরণ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy