কেউ চাপা পড়ে নেই তো! মগরায় ভেঙে পড়া সেতুর নীচে খোঁজ চলছে তারই। ছবি: তাপস ঘোষ।
মগরার জয়পুর শিবতলায় থাকি। গাড়ি সারানোর কাজ করি। সেই কাজেই প্রায় রোজ তেরো নম্বর রেলগেটের কাছে আসতে হয়। উড়ালপুলের নীচে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে রাখি। কাজের মধ্যে মাঝেমাঝেই লেদ কারখানা বা স্পেয়ার পার্টসের দোকানে যেতে হয়। রবিবার সকালেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোটরবাইকে চেপে গ্যারাজে এসেছিসাম। ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে ৯টা। ঠান্ডায় বাইক চালিয়ে আসার জন্য শীতের ভাবটা তখনও পুরোপুরি কাটেনি। সেতুর নীচে বাইকটা সবে স্ট্যান্ড করছিলাম। তার মধ্যেই হঠাৎ মড়মড় করে একটা শব্দ কানে বাজল। চোখ তুলে দেখি, আস্ত সেতুটা যেন আমার দিকে নেমে আসছে। মুহূর্তের মধ্যেই শিরদাঁড়া বেয়ে যেন ঠাণ্ডা একটা স্রোত নেমে গেল। পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পেয়ে বাইক ফেলে রেখেই পড়িমড়ি করে রাস্তার দিকে ছুট লাগালাম। ছুটতে ছুটতেই কানে এল একটা বিকট শব্দ। রাস্তায় এসে যখন পিছনে ফিরে তাকালাম, দেখি সেতু থেকে কংক্রিটের বিশাল একটা গার্ডার ভেঙে পড়ে রয়েছে। একটু দেরি হলে কী হত তা ভাবতেই মনে পড়ে গেল বাড়ির লোকজনের কথা। কয়েক মাস আগে কলকাতায় ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনাটা তখন ফিরে ফিরে মনে আসছে। টিভিতে দেখেছিলাম, কী ভাবে অতগুলো মানুষ চাপা পড়েছিল ব্রিজটার তলায়। আজ হয়তো আমারও একই দশা...। যাই হোক, আমার অবস্থা দেখে এক দোকানদার বসতে দিলেন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে বসার পরে ধাতস্থ হলাম।
ততক্ষণে আশপাশের লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে ছুটে এলেন আমার কাছে। কিছু হয়নি দেখে স্বস্তি সকলের চোখেমুখেই। একটু পরে থানার বড়বাবু এলেন। প্রশাসনের কর্তারাও এসে পড়লেন। ঘিরে ফেলা হল গোটা জায়গা।
ভেঙে পড়া কংক্রিটটা সরানো হবে শুনছি। আর বেশিক্ষণ এখানে থাকব না। আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। এক জন বন্ধুকে পেলাম। ওর বাইকেই বাড়ি ফিরব। এ ছাড়া উপায় কী? আমার নিজের মোটরবাইকটা তো সেতুর তলায়! বাইকটার ক্ষতি আটকাতে পারলাম না। তবে নিজে যে বেঁচে আচি সে জন্য ফের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম।
বাইকে ওঠার আগেই বাড়ি থেকে মোবাইলে ফোন, ‘আমি ঠিক আছি তো’। বাড়ির সকলকে আশ্বস্ত করে রওনা হলাম বাড়ির দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy