Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ব্যান্ডেলে অশান্তি, বাড়ি থেকে ডেকে যুবককে খুন

রাতের ট্রেনে চা বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছিলেন যুবক। পাড়ার অশান্তিতে দু’দল দুষ্কৃতীর বোমাবাজির মাঝখান দিয়েই ফিরতে হয়েছিল।

রক্তাক্ত: ঘাসে লেগে রক্তের দাগ নিহত সানি ঝা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

রক্তাক্ত: ঘাসে লেগে রক্তের দাগ নিহত সানি ঝা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

রাতের ট্রেনে চা বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছিলেন যুবক। পাড়ার অশান্তিতে দু’দল দুষ্কৃতীর বোমাবাজির মাঝখান দিয়েই ফিরতে হয়েছিল। মাঝরাতে সেই যুবককেই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় একদল দুষ্কৃতী। দাবি ছিল, কী কী দেখেছেন ওই চা বিক্রেতা, কোথায় গিয়েছে অন্যদলের লোকজন তা বলে দিতে হবে তাদের। অভিযোগ, কিছু বলতে না পারায় ওই চা বিক্রেতা যুবককে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পরদিন সকালে তাঁর দেহ মিলেছে বাড়ি থেকে খানিক দূরে।

সোমবার রাতে ব্যান্ডেলের মানসপুরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম সানি ঝা (২৫)। মঙ্গলবার সকালে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে পোলবার বেরেকপুর এলাকার এক বাঁশবাগানের মধ্যে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, সানির মাথায়, গলায়, ঘাড়ে— তিনটি এবং পেটে দু’টি গুলি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ব্যান্ডেলের বালিকাটায় এক পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। তাতে জড়িয়ে যায় দু’দল দুষ্কৃতী। শুরু হয় বোমাবাজি, চলে গুলিও। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু বাড়িতে। পুলিশ অবশ্য এলাকায় পৌঁছে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। এমনকী বোমাবাজির ঘটনায় যুক্তদের খোঁজে শুরু হয় তল্লাশিও। কিন্তু তারই মধ্যে সানির বাড়িতে হানা দেয় একদল দুষ্কৃতী।

সানির মা সরস্বতীদেবী জানান, রাত ২টো নাগাদ জনা চারেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চড়ে হানা দেয় তাঁদের লালবাবা আশ্রম সংলগ্ন বাড়িতে। সানিকে ডেকে তুলে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ— বোমাবাজিতে যুক্ত কাউকে সানি চেনে কিনা? তারা কোনদিকে গিয়েছে? ইত্যাদি। সদুত্তর দিতে পারেননি সানি। তখনই তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মারধরও করা হয়। সরস্বতীদেবী বেরিয়ে এসে বাধা দিলে দুষ্কৃতীরা সানিকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ।

প্রতিবেশীরা খবর দেন পুলিশে। শুরু হয় সানির খোঁজ। কিন্তু রাতভর তল্লাশিতেও মেলেনি সন্ধান। মঙ্গলবার ভোরে সানির দেহ উদ্ধার হয় নির্জন এলাকা থেকে। এলাকায় ভাল ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিলেন সানি। প্রতিবেশী শিবপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘হকারি করে নিজের চেষ্টায় রোজগার করত ছেলেটা। শান্ত প্রকৃতির ভাল ছেলেটাকে মেরে ফেলল অকারণে।’’ সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘রাতে যে কী নিয়ে অশান্তি হচ্ছিল, সেটাই তো আমরা জানি না। আমার ছেলেটা কী করে চিনবে দুষ্কৃতীর। ওকে কেন মেরে ফেলল ওরা?’’

জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘সমস্ত ঘটনাটি ব্যান্ডেল এলাকায় ঘটেছে। তবে মৃতদেহটি যে হেতু পোলবার গ্রামীণ এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু হচ্ছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

তবে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে এক ডাকাতির ঘটনায় যুক্তদের খোঁজে পুলিশ হুগলির কানাগড়ের বাসিন্দা এক হকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় খুন হতে হয়েছিল তাঁকে। সে বারও ওই হকারকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আমবাগানের মধ্যে গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে হুগলির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরসারি তিনি বলেছিলেন হুগলির জেলগুলির ভিতর থেকে দুষ্কৃতীদের পরিচালনা করছে মাফিয়ারা। অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। সে কথা যে সত্য তা প্রমাণ হয়ে গেল সোমবার রাতের ঘটনায়— বলছেন এলাকার বাসিন্দারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Bandel Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE