Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চার বছর পরে সাজা ঘোষণা দোষীর

প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণে যাবজ্জীব‌ন‌ কারাদণ্ড

আদালত প্রেমনাথকে বলার সুযোগ দিলে সে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে।

সাজা ঘোষণার পরে কাঁদতে কাঁদতে বেরোচ্ছে প্রেমনাথ।  নিজস্ব চিত্র

সাজা ঘোষণার পরে কাঁদতে কাঁদতে বেরোচ্ছে প্রেমনাথ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০০:৪২
Share: Save:

মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে ধর্ষণের অপরাধে জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটের বাসিন্দা প্রেমনাথ দত্তকে বুধবারই দোষী সাব্যস্ত করেছিল শ্রীরামপুর আদালত। বৃহস্পতিবার তার যাবজ্জীবন‌ কারাদণ্ড হল। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট তহবিল থেকে নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশও করেছে আদালত। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের অপরাধে আগেও যাবজ্জীব‌ন কারাদণ্ডের বিধান ছিল। কিন্তু দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের পরে আইন সংশোধনের ফলে ধর্ষণের সংজ্ঞা অনেকটা বদলে গিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ করা অনেক সোজা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণার সময়ে ওই আদালতের দ্বিতীয় জেলা ও দায়রা বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় দোষীকে বলেন, ‘‘আপনি যা করেছেন, তা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।’’ আদালত প্রেমনাথকে বলার সুযোগ দিলে সে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, সে কিছুই করেনি। বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা একা। সে ছাড়া তাঁকে দেখার কেউ নেই। বিচারক বলেন, এই কথা প্রেমনাথ আগেও ব‌লেছে‌ন। এর পরেই তিনি সাজা ঘোষণা করেন। সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাবাসের সাজা শোনান তিনি।

মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় আদালতকে বলেন, অত্যাচারের জেরে পিতৃহারা ওই তরুণীকে অনেক মানসিক যন্ত্রণা এবং শারীরিক আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। চিকিৎসাও করাতে হয়েছে। সেই কারণে তাঁকে রাজ্য সরকারের ‘ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিম’ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। তাঁর যুক্তি শুনে বিচারক হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে (ডালসা) নির্দেশ দেন, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণ করে নির্যাতিতাকে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওই প্রকল্পে নির্যাতিতাকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সংস্থান রয়েছে বলে আদালত জানায়।

নির্যাতিতার বাড়ি রাজবলহাটে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবর। সে দিন বিকেলে তরুণী বাড়িতে একাই ছিলেন। সেই সময় প্রেমনাথ আইসক্রিম খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তাঁকে সাইকেলে চাপিয়ে স্থানীয় শ্মশান লাগোয়া মাঠে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। তরুণী বাড়ি ফিরে মাকে সব কথা জানান। জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে। নির্যাতিতার মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে জাঙ্গিপাড়া থানার পুলিশ। আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন নির্যাতিতা। প্রেমনাথ গ্রেফতার হয়। পরে জামিন পায়। বুধবার প্রেমনাথকে হেফাজতে নেয় আদালত।

জেলার বর্ষীয়ান আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী জানান, কয়েক বছর আগে গুড়াপের একটি হোমের এক আবাসিককে ধর্ষণের মামলাতেও এক জনের যাবজ্জীবন হয়েছিল। তবে, নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে আইন সংশোধনের ফলে এই সব ক্ষেত্রে কঠিন বা দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার বিষয়টি সহজ হয়েছে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎবাবু বা কালীপ্রসাদ সিংহরায়ের মতো আইনজীবীরা। এ দিনের রায় শুনে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী মহিলাকে ধর্ষণ করলে যাবজ্জীব‌ন কারাদণ্ডের বিধান আইনে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ, এ ক্ষেত্রে প্রকৃত দোষী ব্যক্তির প্রতি নরম মনোভাব আদালত যেন না দেখায়।’’

আদালত সঠিক বিচার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rape Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE