প্রতীকী ছবি।
এ বার শেষরক্ষা হল না।
যন্ত্রপাতি এনে, বোমাবাজি করেও আরামবাগের মুণ্ডেশ্বরী নদীর শাখা ‘কানা নদী’ থেকে বালি লুট করতে সফল হল না দুষ্কৃতীরা। শনিবার গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে তাদের রুখে দিলেন।
তৃণমূল নেতারাই গোটা ঘটনার নেপথ্যে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। বোমাবাজি এবং অশান্তির খবর পেয়ে এ দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীর এই সচেতনতার প্রশংসা করে আরামবাগ ব্লক ভূমি আধিকারিক জয়ন্ত ভড় বলেন, “কানা নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে বালি চুরির অভিযোগ প্রায়ই আসে। কয়েকবার অভিযানও হয়েছে। বালি তোলার সরঞ্জামও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বালি চুরি রুখতে গ্রামবাসীদের সচেতনতা খুব জরুরি ছিল।”
আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন নদনদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও তৃণমূল নেতাদের মদতে বালি লুটের অভিযোগের অন্ত নেই। এ নিয়ে আগে অশান্তিও হয়েছে। গত বুধবারই আরামবাগের এক নেতার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন ওই দলেরই আর এক নেতা। দু’দিন ধরে চলে সেই অবস্থান। নেতাদের ওই ‘বেআইনি কারবার’ নিয়ে সাধারণ মানুষ এতদিন ভয়ে কিছু বলতেন না। কিন্তু এ বার তাঁদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল।
জল শুকিয়ে যাওয়াও কানা নদী প্রায় মজে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে ওই নদীর পশ্চিম প্রান্তে, আরামবাগের আরান্ডি-২ পঞ্চায়েত এলাকার গোপালদল মৌজায় যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে দেখে জনাদশেক গ্রামবাসী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। দু’পক্ষের বচসা এবং ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। খবর পেয়ে আরও গ্রামবাসী এসে বালি তোলার কাজে যুক্ত লোকজনকে তাড়া করেন। যন্ত্র নিয়ে তারা সে সময় পালায়। ফের বিকেলে কানা নদীর পূর্ব পাড়ে, পুরশুড়ার যশারে গিয়ে তারা যন্ত্র দিয়ে বালি তুলতে শুরু করে। সাহেব মান নামে এক গ্রামবাসী তা দেখে আপত্তি জানান। বালি তোলার কাজে যুক্ত লোকজন তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা লাটিসোটা এনে শেখ ইসমাইল ওরফে বাপি নামে হামলাকারীদের একজনকে মারধর করে ঘটনাস্থল থেকে তাড়ান। রাতে যশার এবং গোপালদহে বোমাবাজি হয়।
কেন প্রতিবাদ করলেন গ্রামবাসী?
তাঁদের দাবি, আর সহ্য হচ্ছিল না। পুলিশ-সহ নানা মহলে এক শ্রেণির তৃণমূল নেতার এই বালি লুটের কারবার নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাঁরা সরকারি ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করে মহকুমার নদীগুলো থেকে বালি চুরি করে তা সরবরাহ করে চলেছেন। শেখ রবিয়াল নামে এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘‘আরান্ডি-২ অঞ্চলের তৃণমূল নেতা শেখ সইদুলের নেতৃত্বেই বালি চুরির এই রমরমা।’’ শঙ্কার দাস নামে আর এক গ্রামবাসীর দাবি, ‘‘শেখ সইদুলের দলবলই বোমাবাজি করে। বালি চুরি ঠেকিয়ে বাপি নামে যাকে তাড়ানো হয়, সে-ও সইদুলের লোক।’’
সইদুল অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘বালি চুরির সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। ঠিকাদার বালি তুলছে। তারা ভূমি দফতরের অনুমতি নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এলাকার ছেলেরা ওই ঠিকাদারের বালি তোলার কাজে শ্রমিকের কাজ করছে। তাদের গ্রামবাসীরা মারধর করেছে খবর পেয়ে এলাকায় বিষয়টা জানতে গিয়েছিলাম। বোমাবাজির অভিযোগও মিথ্যা।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশ বালি চুরির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করবে। দলের কেউ তাতে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy