Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গার ঘাট সাফ, কিন্তু পুকুর, খালে সেই তৎপরতা উধাও

একই যাত্রায় পৃথক ফল। প্রতিমা বিসর্জনের পর গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত রাখতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল কলকাতা পুরসভা। হাওড়া বা হুগলির গঙ্গাতীরবর্তী পুরসভাগুলি দ্রুততার সঙ্গে ঘাট সাফাইয়ের কাজ করলেও পুর এলাকায় পুকুর বা খাল থেকে কাঠামো সাফাইয়ে সেই তৎপরতা চোখে পড়ল না।

সিঙ্গুরের মির্জাপুর-বাঁকিপুরে তোলা হয়নি কাঠামো। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সিঙ্গুরের মির্জাপুর-বাঁকিপুরে তোলা হয়নি কাঠামো। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

একই যাত্রায় পৃথক ফল।

প্রতিমা বিসর্জনের পর গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত রাখতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল কলকাতা পুরসভা। হাওড়া বা হুগলির গঙ্গাতীরবর্তী পুরসভাগুলি দ্রুততার সঙ্গে ঘাট সাফাইয়ের কাজ করলেও পুর এলাকায় পুকুর বা খাল থেকে কাঠামো সাফাইয়ে সেই তৎপরতা চোখে পড়ল না। পুর এলাকার বাইরে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে সেই ঘাটতি আরও প্রকট। সে সব ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যত প্রশাসনের কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার একমাত্র পুরসভা উলুবেড়িয়ায় গঙ্গার ঘাটগুলিতে ফুল-পাতা পড়ে থাকতে না দেখা গেলেও কোনও কোনও ঘাটে প্রতিমার কাঠামো ভাসতে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর, রূপনারায়ণ নদীতেও প্রতিমার কাঠামো থেকে পুজোর নানা উপকরণ এখনও পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। নদী ছাড়াও বহু পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়। কিন্তু রবিবার বহু জায়গাতেই ঘুরে দেখা গেল পুকুরে ভাসছে কাঠামো থেকে ফুল। সে সব সরাতে উদ্যোগ নেই পঞ্চায়েতগুলিরও।

এ দিন উলুবেড়িয়ার লঞ্চঘাট সহ কয়েকটি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল কিছু কাঠামো পুরসভার তরফে তুলে পাড়ে রাখা হলেও এখন গঙ্গায় পড়ে কাঠামো। তবে উল্টো ছবিও চোখে পড়েছে। যেমন বাউড়িয়া লঞ্চঘাট। সেখানে গঙ্গায় কোনও কাঠামো বা পুজোর উপকরণ পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। তবে এখানেও কিছু পুকুরে প্রতিমার কাঠামো-সহ নানা সামগ্রী ভাসতে দেখা গিয়েছে। যেমন যদুরবেড়িয়া রথতলা এলাকার একটি পুকুরে এখনও ভাসছে কাঠামো-সহ ফুল-বেলপাতা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান এই পুকুরটি বহু লোক ব্যবহার করেন। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জনের পর সেটা সাফ করার ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের কোনও উদ্যোগ নেই।

উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ও সাফাই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্বাসউদ্দিন খান বলেন, ‘‘আমাদের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। গঙ্গার সাতটি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়। সেখানে পুরসভার তরফে সাফাই কর্মীরা প্রতিমার কাঠামো সহ ফুল পাতা মালা পরিষ্কার করে ফেলেছেন। যে কয়েকটা কাঠামো নদীতে ভাসতে দেখা গিয়েছে সেগুলো হয়তো শনিবার রাতে বা রবিবার সকালে ফেলা হয়েছে। তবে আজকেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ পুকুরগুলি পরিষ্কার নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুকুরও পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে সময় লাগবে।’’

হাওড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত গুলোকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হবে পরিষ্কার করার জন্য।’’

পুরপ্রধান এমন দাবি করলেও রূপনারায়ণ নদীর মানকুর ঘাটে দেখা গেল প্রতিমার কাঠামো, ফুল জলে ভাসছে। স্থানীয় কিছু কিশোরকে বিক্রির জন্য কাঠামো তুলতে দেখা গেলেও প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ল না। গ্রামবাসীরা জানান, প্রতি বছর এ ভাবেই এলাকার ছেলেরা নদী থেকে কাঠামো তুলে নেয় ফুল-বেলপাতা অবশ্য পড়ে থেকে ভেসে যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এ সব তোলার কোনও ব্যবস্থা হয় না।

স্থানীয়। বাসিন্দা বাপি ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা বহুবার লিফলেট ছাপিয়ে মানুষকে সচেতন করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। নদী বা পুকুর দূষণ বন্ধে প্রশাসনের তরফে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’ বাগনান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নয়ন হালদার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। শীঘ্রই নদীর ঘাট ও পুকুর পরিষ্কারের ব্যবস্থা হবে। পঞ্চায়েতগুলিকেও এই কাজ করতে বলা হবে।’’

ডোমজুড়ে রবিবার পর্যন্ত অনেক পুকুরে কাঠামো, ফুল পড়ে রয়েছে। ভাণ্ডারদহের কাছে সরস্বতী নদীতেও কাঠামো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

হুগলিতেও পুর এলাকা লাগোয়া গঙ্গার ঘাটগুলি থেকে কাঠামো, ফুল সাফ করা হলেও অন্যত্র ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে বিভিন্ন পুকুর, খালে কাঠামো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, হরিপাল, মশাট, তিলাটি, পান্ডুয়া প্রভৃতি জায়গায় পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার চল আছে। কিন্তু কোথায় দূষণ নিয়ে সচেতনতা নেই। প্রতিমা বিসর্জনের পরে এখনও অনেক পুকুরে কাঠামো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ভাসছে ফুল-বেলপাতা সহ নানা সামগ্রী। গুপ্তিপাড়ায় বেহুলা নদী বা চন্ডীতলায় সরস্বতী নদীরও একই হাল। এ সব নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নজরদারিও চোখে পড়েনি। চণ্ডীতলা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য সুরজিৎ মণ্ডল সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ করা যায় তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’’

আরামবাগ পুরসভার এলাকায় মোট ৩৬টা দুর্গাপুজো হয়। সবকটি প্রতিমাই দিঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের সময় পুরসভা ঘাটে আলো দেয়। পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলি বিসর্জনের তিন দিনের মাথায় কাঠামোগুলে তুলে নেয়। এবারেও নিয়েছে। পুকুরগুলোও আমরা পরিষ্কার করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তিনটি দিঘিতেও মাছ চাষ হওয়ায় দিঘির মালিক বা মাছ চাষিরা নিজেরাই সেই কাজ করেছেন।”

মহকুমা দিয়ে তিনটি নদী দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদর বয়ে গেছে। পুলিশের হিসাবে খালি পুরশুড়ায় দামোদরের খুশিগঞ্জ ফেরিঘাটে পরপর ১৮টি প্রতিমা বিসর্জন হয়। এছাড়া মুণ্ডেশ্বরী বা দ্বারকেশ্বর নদীর বিক্ষিপ্ত চারটি ঘাটে সংলগ্ন চারটি গ্রামের প্রতিমা বিসর্জন হয়। ওইসব ঘাটের মধ্যে পুরশুড়ার খুশিগঞ্জ ফেরিঘাটে বিসর্জনের পরের দিন সকালেই সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলো পুলিশের তদারকিতে কাঠামোগুলো তুলে নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Idol Immersion Water Polluted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE