Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

বন্ধ জুটমিলের শ্রমিক ফেরি করছেন আনাজ

করোনা এবং তার জেরে লকডাউন। পেশাটাই বদলে দিয়েছে অনেক প্রান্তিক মানুষের। নতুন পেশাতে কি তাঁরা মানিয়ে নিতে পারছেন? স্বাচ্ছন্দ্যই বা কতটা? তাঁদের অবস্থার খোঁজ নিল আনন্দবাজার।হুগলির গঙ্গাপাড়ের বহু মানুষ জুটমিলে কাজ করে গ্রাসাচ্ছাদন করেন। উমেশও ছিলেন সেই দলে।

পরিবর্তন: আনাজ বিক্রিই ভরসা এখন উমেশের। নিজস্ব চিত্র

পরিবর্তন: আনাজ বিক্রিই ভরসা এখন উমেশের। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল 
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

লকডাউন মানে বাড়িতে থাকতে হবে। কিন্তু তাতে কি পেট মানবে! খিদে মেটাতেই জুটমিল শ্রমিক উমেশ সাউ আনাজ বিক্রেতা বনেছেন। কিন্তু, যা পরিস্থিতি, আবার কাজ খুঁজতে হচ্ছে।

হুগলির গঙ্গাপাড়ের বহু মানুষ জুটমিলে কাজ করে গ্রাসাচ্ছাদন করেন। উমেশও ছিলেন সেই দলে। ষোলো বছর আগে দৈনিক ৭০ টাকা মজুরিতে তিনি শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলে কাজে ঢোকেন। বাড়তে বাড়তে সেই মজুরি ৩০০ টাকা হয়েছিল। ইএসআই, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও জমা পড়ছিল। খুব বেশি উপার্জন না হলেও ভালমন্দে সংসার চলত। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে মিল বন্ধ হয়ে যায়। আর খোলেনি। তাতে উমেশের নতুন তকমা জোটে। বন্ধ চটকলের শ্রমিক।

উমেশদের যৌথ পরিবার। বাবা, মা, স্ত্রী, চার ছেলেমেয়ে, ভাই— সবাই মিলে থাকেন। শ্রীরামপুরে রাইল্যান্ড রোডে রেল লাইনের ধারে তাঁদের টালির ছাউনি দেওয়া ঘর। জায়গাটা রেলের। মিল বন্ধ হওয়ায় পেট চালাতে বালির হনুমান জুটমিলে বদলি শ্রমিকের কাজ শুরু করেন উমেশ। কাজ করলে নগদ ৪০০ টাকা মিলত। তবে, সারা মাসে দশ দিনও কাজ মিলত না। সেই কারণে মাঝেমধ্যে ঘি অথবা আনাজ বিক্রি শুরু হল। বাড়ির কাছেই পাঁচুবাবুর বাজার। সেখানেই রাস্তার উপরে কিছু পেতে বসে পড়তেন।

এ ভাবেই চলছিল। তার মধ্যেই করোনার থাবা। লকডাউন। জুটমিল বন্ধ। বদলি শ্রমিকের কাজটুকুও করার উপায় আপাতত নেই। এই পরিস্থিতিতে তেত্রিশ বছরের যুবক শেওড়াফুলি হাট থেকে আনাজ এনে বাজারে বসছিলেন। কপাল মন্দ থাকলে ভাল বিক্রি হয় না সব দিন। আনাজ পচে যায়। এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার থেকে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। করোনা মোকাবিলায় আরও কড়া ব্যবস্থা হিসেবে পাঁচুবাবুর বাজার বন্ধ করা হয়েছে। ফলে, আরও এক বার পেশা থেকে ঠাঁইনাড়া হওয়ার অবস্থা উমেশের।

উমেশ অবশ্য হাল ছাড়ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো বাড়ি বাড়ি ভ্যানে করে আনাজ-মাছ যাবে। আমাদের একটা ভ্যান আছে। কাউন্সিলরকে বলেছি, আমি বা ভাই যদি আনাজ নিয়ে ভ্যানে বেচতে পারি।’’ উমেশের আর এক ভাই এবং বাবা মিলে দুধ বেচেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা আয় হয় না। উমেশ বলেন, ‘‘খুব চিন্তায় আছি। আমাদের মতো পরিবারে কী জমানো টাকা থাকে যে ভাঙিয়ে খাব!’’

উমেশ জানান, বেশির ভাগ দিনই দুপুরে ভাত, ডাল, করলা ভাজা দিয়েই খাওয়া সারতে হচ্ছে। রাতে রুটি-তরকারি। গ্যাস বাঁচাতে দুপুরে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চারা বায়না করলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাখছি। বড় মেয়ের বয়স ১০ বছর। পরশু দিন মাংস খাওয়ার আব্দার করেছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝালাম, এখন মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। মাছ খাওয়ার কথাও ভাবতে পারছি না। এক কেজি মাছ আনলে আমাদের সকলের এক টুকরো করে হবে। কিন্তু ওই টাকায় ডাল, ভাত, আলুসেদ্ধ অথবা সব্জি খেয়ে দু’তিন দিন চলে যাবে।’’

জুটমিলের শ্রমিক হিসেবে আয়ের একটা নিশ্চিন্ত ঠিকানা ছিল উমেশের। মিল বন্ধ হওয়ায় অন্য কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু, ফের অনিশ্চয়তা! বন্ধ কারখানার শ্রমিকের স্বগতোক্তি, ‘‘কিছু একটা করার চেষ্টা করতেই হবে। পেট তো আর মানবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Jute Mill Serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE