হাতে গোনা কর্মীই ভরসা মুরগি-খামারে। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের জেরে লকডাউন-পর্বের শুরু থেকে সপ্তাহ দুয়েক প্রায় জলের দরে বিকিয়েছে মুরগির মাংস। কোথাও ৫০ টাকা কেজি, কোথাও ৬০-৭০ টাকা। তা-ও নেওয়ার খদ্দের মিলছিল না। সপ্তাহখানেক আগেও এক কেজি মুরগির মাংস মিলছিল ১২০-১৩০ টাকায়। আর এখন ১৮০-২০০ টাকা!
এক ঝটকায় এতটা দামবৃদ্ধি?
রাজ্যের অন্যতম মুরগির মাংসের উৎপাদক জেলা হুগলি। এখানকার কারবারিদের দাবি, মুরগি বিশেষ মিলছে না। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মানুষের চাহিদাও রয়েছে। ফলে, দাম বাড়ছে। রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশনের হুগলি জেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটবড় মিলিয়ে এই জেলায় বারোশোরও বেশি খামার রয়েছে। লকডাউনের আগে পর্যন্ত সপ্তাহে ১২-১৫ লক্ষ কেজি মাংস উৎপাদন হচ্ছিল। এখন হচ্ছে বড়জোর ৬-৭ লক্ষ কেজি। কমিটির সভাপতি সুজয় সাধু বলেন, ‘‘পোলট্রি শিল্প ঘোর সঙ্কটে রয়েছে। আগামী কয়েক মাস মুরগির মাংস পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। চাহিদার তুলনায় অনেক কম পাওয়া গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা তো মুশকিল।”
লকডাউনের জেরে জেলার অধিকাংশ খামারেই মুরগি পালন বন্ধ। যে সব খামারে তবু কিছু মুরগি রয়েছে, সেখান থেকেও বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তাঁদের পক্ষে আরামবাগের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আগে এক কেজি মুরগি ৬০-৭০ টাকায় কিনতাম। এখন কিনছি ১২০-১৩০ টাকায়। এর উপরে পরিবহণ খরচ রয়েছে।’’ খামার-মালিকদের পক্ষে গোঘাটের বামনিয়া গ্রামের কাশীনাথ চক্রবর্তী বলেন, “নতুন করে আর মুরগির ছানা আসছে না। যে সংস্থার (হ্যাচারি) থেকে আমরা ছানা নিই, তারা দিতে পারছে না। মুরগির খাবার অপ্রতুল। দামও বেড়েছে। উপরন্তু খাবারের গুণমান ঠিক নেই। ৪০ দিনে যে ছানার ২ কেজি ওজন হয়ে যায়, তা হচ্ছে ১ কেজি ২০০ গ্রামের মতো। সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে। কিন্তু উৎপাদন কমছে। দাম না-বাড়িয়ে উপায় নেই।”
যেখান থেকে মুরগির ডিম ফুটিয়ে ছানা উৎপাদন হয়, জেলার সেইসব ছোটবড় হ্যাচারি লকডাউনের জেরে ধুঁকছে। হ্যাচারি শিল্প টিকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন মালিকেরা। তারকেশ্বরের বালিগোড়ির হ্যাচারি-মালিক পক্ষের প্রবীর মোদক বলেন, ‘‘ব্রয়লার মুরগির ছানা উৎপাদনের জন্য হায়দরাবাদ, পঞ্জাব-সহ নানা রাজ্য থেকে ডিম আমদানি হতো যাত্রিবাহী ট্রেনের ভেন্ডার-কামরায়। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় তা আসছে না। ফলে, প্রায় ৬০ শতাংশ মুরগি ছানা উৎপাদন কমে গিয়েছে।’’ ডানকুনিতে জেলার সবচেয়ে বড় হ্যাচারি রয়েছে। সেই সংস্থার আরামবাগ শাখার সুপারভাইজার সৌরভ দে বলেন, “আমাদের হ্যাচারিতে সপ্তাহে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মুরগি ছানা উৎপাদন হতো। এখন নানা প্রতিবন্ধকতায় ৪০-৫০ হাজার হচ্ছে।”
পোলট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরও। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে যা মুরগির খাবার মজুত আছে, তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা যাবে। তারপরে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দফতরের উপ-অধিকর্তা রূপম বড়ুয়া বলেন, “করোনা এবং লকডাউনের জেরে এতবড় শিল্পের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চিন্তায় আছি। তবে মুরগির মাংসের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। কালোবাজারি হতে পারে। বিষয়টা আমরা পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy