Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

‘ফিরেও ঘরে ফেরা হল না, এখন ঠাঁই কলেজে’

২৩ মার্চ ফেরার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু লকডাউনে ফিরতে তো পারলামই না, শুরু হয় এক অনিশ্চিত জীবনযাপন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তাসিন খান (উলুবেড়িয়ার খলিসানির বাসিন্দা)
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০২:১৫
Share: Save:

বেড়াতে গিয়ে অজমেরে আটকে পড়ব ভাবিনি। মনে হচ্ছিল আর বেরোতে পারব না। শেষমেশ মঙ্গলবার ডানকুনিতে এসে পৌঁছনোয় কী যে আনন্দ হচ্ছিল, বোঝাতে পারব না। কিন্তু আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হল না।

ডানকুনি থেকে আমাদের আনা হয় সাঁত্রাগাছি। সেখান থেকে বাস। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সময়ে বাসের সামনে একটি পুলিশ ভ্যান চলে এল। খলিসানিতে বাস দাঁড়াল না। চালক জানালেন, পুলিশ যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানে যেতে হবে আমাদের।

পুলিশ ভ্যানের পিছনে বাস এসে থামল উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি কলেজের সামনে। পুলিশ জানাল, কলেজেই আমাদের ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকতে হবে। কী আর করা যাবে! সরকারি নির্দেশ মানতে হবে।

৫২ দিন আটকে ছিলাম অজমেরে। এখানে থাকতে হবে ১৪ দিন। অজমেরে যখন ছিলাম, তখন ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। এখানে অন্তত জানতে পারলাম, ১৪ দিন পরে হলেও ঘরে ফিরতে পারব আমরা।

আমরা মানে মোট ২৪ জন। ২২ জন খলিসানির। দু’জন পাঁচলার। ছ’দিনের জন্য অজমের গিয়েছিলাম। ২৩ মার্চ ফেরার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু লকডাউনে ফিরতে তো পারলামই না, শুরু হয় এক অনিশ্চিত জীবনযাপন।

দরগার কাছে একটি অতিথিশালায় ছিলাম। টাকা ছিল সীমিত। সরাসরি বাইরে বেরিয়ে খাবার কিনতে পারতাম না। পাশের অতিথিশালায় থাকা এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনিই খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। অবশ্য দাম দিতে হত। পরে রাজস্থা‌ন সরকারের তরফ থেকে কিছু চাল-আটা দেওয়া হয়। অতিথিশালার মালিকও কিছু ব্যবস্থা করে দেন।

ভাল খবর নিয়ে আসে ওখানকার দরগা কমিটি। জানানো হয়, বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা হয়েছে। ফর্ম পূরণ করতে হয়। রবিবার কমিটি জানায়, ফেরার ট্রেন সোমবার। সে দিন সকাল ৬টা নাগাদ আমরা দরগার ১ নম্বর গেটের সামনে যাই। সেখানে আমাদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা হয়। তারপরে বাসে অজমের স্টেশন। স্টেশনে আমাদের আর এক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। রেলের তরফে আমাদের ট্রেনের টিকিট দেওয়া হলেও পয়সা লাগেনি।

ট্রেনে শোওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। এক-একটি আসনের দু’প্রান্তে দু’জন করে বসেছিলাম। ট্রেন ছাড়তেই জলের বোতল ও বিস্কুটের প্যাকেট দেওয়া হয়। রাতে আগরায় ট্রেন থামে। খিচুড়ি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে ট্রেন থামে বর্ধমানে। সেখানে দেওয়া হয় কেক-জল। সবই দরজার সামনে থেকে।

ডানকুনিতে আমাদের ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তারপরে বাসে সাঁত্রাগাছি। প্রথমে বলা হয়েছিল বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়িতে নয়, নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে কলেজে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE