Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মা-বাবার বকুনির ভয়ে স্কুলে ‘ঝাঁপ’ ছাত্রীর

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বালির বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ে। পুলিশ জানায়, গুরুতর জখম অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উত্তরপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৬
Share: Save:

আচমকাই উপর থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন শিক্ষিকারা। দেখলেন একতলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। যে কিছু ক্ষণ আগেই শিক্ষিকাকে ডায়েরি দিতে এসেছিল!

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বালির বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ে। পুলিশ জানায়, গুরুতর জখম অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উত্তরপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে। তার দুই পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। কোমরে ও মাথার খুলিতেও গুরুতর আঘাত লেগেছে। তবে ঘটনার পরে অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসকের অপেক্ষায় ঘণ্টাখানেক ওই ছাত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্কুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, স্কুলে তিন জন শিক্ষিকা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসেন। ঘটনার পরে তৎক্ষণাৎ সেই গাড়িতে চাপিয়ে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না করে কেন অ্যাম্বুল্যান্স আসার অপেক্ষায় শিক্ষিকারা বসে থাকলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।

এমনকী ঘটনার বেশ কিছু ক্ষণ পরে এক টোটো চালক গিয়ে স্থানীয় এক চিকিৎসককে বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। সেই চিকিৎসক সরোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফোনে আমাকে বলা মাত্রই আমি ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম। তবু যেতে অনুরোধ করায়, আমি যাই। তবে তত ক্ষণে অ্যাম্বুল্যান্স এসে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’’ যদিও তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতি রয়েছে বলে মানতে নারাজ প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী বসু। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করা আমাদের কর্তব্য। বালিতে দুপুরে চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া কঠিন। তাই কয়েক মিনিট সময় লেগেছে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে পাঠাতে।’’

বর্ণালীদেবীর আরও দাবি, ‘‘শিক্ষিকাদের গাড়িতে নিয়ে গিয়ে খারাপ কিছু ঘটলে, তার দায় কে নিত? তাই চিকিৎসক ডেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে পাঠানো হয়েছে।’’ স্কুলের বাইরের টোটো স্ট্যান্ডের এক চালক অনুপ দাস জানান, খবর পেয়ে তিনি গিয়ে দেখেন মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটার যা অবস্থা ছিল, তাতে টোটোতে নিয়ে যাওয়া যেত না। তাই আমি টোটো নিয়ে চিকিৎসকের বাড়িতে ডাকতে যাই।’’

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী পেতে বিয়ে দিল বিজেপি

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বালি থানার পুলিশ গিয়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে। বালি সাঁপুইপাড়ার বাসিন্দা বছর ষোলোর ওই ছাত্রী পুলিশকে জানিয়েছে, অনেকেই তার নামে মিথ্যা কথা রটাচ্ছিল। তাই শুনে শিক্ষিকারাও সেটি বিশ্বাস করে তার অভিভাবককে ডাকার জন্য ডায়েরি চেয়েছিলেন। সেই মতো এ দিন সে প্রধান শিক্ষিকার ঘরেও গিয়েছিল। সেখানে ডায়েরি নেওয়ার সময়ে তাকে বকাবকিও করেন শিক্ষিকারা। পুলিশকে ওই ছাত্রী বলে, ‘‘মা-বাবার বকুনি খাব ভেবে ঝাঁপ দিই।’’

ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে পাঠানোর সময়ে কোনও শিক্ষিকা সঙ্গে থাকলেন না কেন? বর্ণালীদেবীর জবাব, ‘‘ছাত্রীর অবস্থা দেখে শিক্ষিকারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাই স্থানীয়েরা ও অশিক্ষক কর্মীরা গিয়েছিলেন ওই ছাত্রীকে নিয়ে। তবে শিক্ষিকারা পরে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE