Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

যুবককে খুনের নালিশে স্ত্রীকে মার, ভাঙচুর

রবিবার সকালে স্বপন শা (৩৭) নামে ওই যুবকের অপমৃত্যুতে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে বাড়িতে ভাঙচুর চালাল এলাকাবাসীর একাংশ। প্রহৃত হন স্বপনের স্ত্রী ও তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজনও।

অশান্তি: বাড়ির সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। অাহত স্বপনবাবুর শ্যালক (ইনসেটে)। ছবি: তাপস ঘোষ

অশান্তি: বাড়ির সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। অাহত স্বপনবাবুর শ্যালক (ইনসেটে)। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

প্রায়ই এলাকার এক দম্পতির অশান্তি দেখতেন হুগলির কানাগড় আশ্রম মাঠের বাসিন্দারা। রবিবার সকালে স্বপন শা (৩৭) নামে ওই যুবকের অপমৃত্যুতে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে বাড়িতে ভাঙচুর চালাল এলাকাবাসীর একাংশ। প্রহৃত হন স্বপনের স্ত্রী ও তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজনও। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। তবে, রাত পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না-হওয়ায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, মৃতের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

খুনের অভিযোগ উড়িয়ে স্বপনের স্ত্রী সাবিনা ফ্লোরিয়েনের দাবি, ‘‘শনিবার রাতে স্বামী অতিরিক্ত মদ খেয়ে মোটরবাইকে বাড়ি ফেরার সময়ে পথ দুর্ঘটনায় আহত হন। ভোরের দিকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। চোট লাগার কারণেই ও মারা গিয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে এক বছর আগে ব্যান্ডেলের লিলিবাগান ক্রিশ্চিয়ান পল্লির বাসিন্দা সাবিনাকে বিয়ে করেন স্বপন। ব্যান্ডেল স্টেশনে স্বপন একটি চায়ের দোকান চালাতেন। আদতে ব্যান্ডেল লোকোপাড়ার বাসিন্দা স্বপন দ্বিতীয় বার বিয়ের পরে মাসচারেক আগে আশ্রম মাঠ এলাকায় বাড়ি তৈরি করে থাকছিলেন। শনিবার গভীর রাতে তিনি বন্ধুদের একটি মদের আসর থেকে ফেরেন। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ সাবিনা এলাকার এক টোটো-চালককে ফোনে ডেকে স্বামীকে জখম অবস্থায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই স্বপন মারা যান।

স্বপনের মৃত্যুর কথা জানাজানি হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বেশ কিছু লোক স্বপনের বাড়ির সামনে জড়ো হন। সাবিনা আগেই বাপেরবাড়ি চলে গিয়েছিলেন। টোটো-চালক তন্ময় দাসের থেকে এলাকাবাসী জানতে পারেন, স্বপনের মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল। তাঁর হাত-পা ফুলে গিয়েছিল। এর পরেই মারধর করে স্বামীকে খুনের অভিযোগ ওঠে সাবিনার বিরুদ্ধে। এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই স্বপন-সাবিনার অশান্তি হতো। স্বামীকে প্রকাশ্যে মারধরও করতেন সাবিনা।

ওই বাড়িতে ভাঙচুরের কথা জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। ওই বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ের ঝোপ থেকে পুলিশ একটি বালিশ, রক্তমাখা একটি জামা ও চাদর উদ্ধার করে। এতে স্থানীয়েরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের দাবি, ওই সব জিনিসপত্র স্বপনেরই। তাঁরা লিলিবাগানে স্বপনের শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হন। সাবিনা, তাঁর ভাই ও মাকে মারধরের
অভিযোগও ওঠে।

পুলিশ গিয়ে সাবিনাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁর ভাই ও মাকে চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠায়। স্বপনের দেহটিও ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। আশ্রম মাঠ এলাকার বাসিন্দা শোভা পাসোয়ান বলেন, ‘‘স্বপনের সঙ্গে ওঁর স্ত্রীর প্রায়ই অশান্তি হতো। কেন জানি না। প্রায়ই রাতে ওই বাড়িতে লোকজন আসত। সংসারে অশান্তি থাকতেই পারে। কিন্তু স্বামীকে প্রকাশ্যে মারধর মেনে নেওয়া যায় না। ভাল লোকটাকে খুন করা হয়েছে।’’

খুনের অভিযোগ মানেননি সাবিনার ভাই সুজিত ফ্লোরিয়েনও। তিনি বলেন, ‘‘জামাইবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিদি বাড়িতে এসেছিল। এরপরই মৃত্যুর খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গেই পাড়ার কিছু লোক আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমাকে এবং মাকে মারধর করে চলে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE