Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বধূ ‘খুন’, দেহ ফেলে রেখেই চম্পট স্বামীর

জামাই ফোন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ।

পূর্ণিমা গলুই

পূর্ণিমা গলুই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

জামাই ফোন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর শুনে সেই তরুণীর বাপের বাড়ির লোকজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে দেখলেন, স্ট্রেচারে শোয়ানো রয়েছে মেয়ের নিথর দেহ। খোঁজ করতেই দেখা গেল, শ্বশুরবাড়ির যারা ওই তরুণীকে ভর্তি করতে এনেছিল, তারা তত ক্ষণে চম্পট দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ওই তরুণীকে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি মিলে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে চম্পট দিয়েছে, এমনটাই অভিযোগ বাপের বাড়ির লোকজনের। চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ একটি খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর নাম পূর্ণিমা গলুই (২১)।

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে বেতড় মোড় এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সিংহের বোন পূর্ণিমার সঙ্গে মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোডের অভিজিৎ গলুইয়ের বিয়ে হয়। ওই দম্পতির দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিশ্বজিতের অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তাঁর বোনের উপরে অত্যাচার শুরু করে প্লাস্টিক কারখানার কর্মী অভিজিৎ। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কারণে পূর্ণিমাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিত ওই যুবক। শুক্রবার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘বোনকে সুখী রাখতে আমাদের সাধ্যমতো কখনও ৩০ হাজার টাকা, কখনও বা ২০ হাজার— যখন যেমন পেরেছি, দিয়েছি। টাকা না দিলেই বোনের উপরে অত্যাচার করত।’’

বিশ্বজিৎ পুলিশের কাছে লি‌খিত অভিযোগে জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে পূর্ণিমা বাপের বাড়িতে এসে জানান, বাড়ি তৈরির জন্য তিন লক্ষ টাকা দাবি করেছে অভিজিৎ। কিন্তু সেই টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বজিতেরা। তিনি বলেন, ‘‘টাকা দিতে পারব না বলতেই বোনের উপরে শ্বশুরবাড়ির সকলে মিলে অত্যাচার শুরু করে। দেড় বছরের বাচ্চাটাকেও রেহাই দেয়নি। ফোন করে বোন বলত, টাকা না দিলে ওরা ওকেও মেরে ফেলবে।’’ বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিজিৎ অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে শ্যালক বিশ্বজিৎকে জানায়, শরীর খারাপ হওয়ায় পূর্ণিমাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে বিশ্বজিতেরা সেখানে গিয়ে কাউকে দেখতে পাননি বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এর পরে ফের অভিজিৎকে ফোন করা হলে সে সকলকে হাওড়া জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে আসতে বলে। সেই মতো বিশ্বজিতেরা সেখানে গিয়ে দেখেন, অভিজিৎদের কেউ নেই। জরুরি বিভাগে স্ট্রেচারে শোয়ানো রয়েছে পূর্ণিমার দেহ।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে গিয়ে পরিচয় দেওয়ার পরেই তিনি খোঁজ করেন যাঁরা ভর্তি করতে নিয়ে এসেছিল, তাদের। বেশ কিছু ক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও কাউকে পাওয়া যায়নি।’’ চিকিৎসকেরা জানান, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। খবর পেয়ে আসে পুলিশ। এর পরে চ্যাটার্জিহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিজিৎদের বাড়িতে গিয়ে দেখে, দেড় বছরের ছেলে ও মা-বাবাকে নিয়ে চম্পট দিয়েছে ওই যুবক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরেই জরুরি বিভাগে দেহটি রেখে পালিয়েছে তার

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman dead Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE