Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মা কেন যে বৃদ্ধাশ্রমে যান না!

অসীমাদেবীর স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগে। তাঁর এক ছেলে, দুই মেয়ে। মেয়েরা বিবাহিত। বড় মেয়ে প্রণতি দমদম ক্যান্টনমেন্টে থাকেন। ছোট তপতী থাকেন জলপাইগুড়িতে। ছেলে প্রভাত দমদমের বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মেয়েরা তবু মাঝেমধ্যে মাকে দেখতে আসেন বলে জানান অসীমাদেবীর পড়শিরা। কিন্তু ছেলের দেখা মেলে না।

স্মৃতিচারণ: পুরনো ছবিতে ছেলেকে খোঁজা। নিজস্ব চিত্র

স্মৃতিচারণ: পুরনো ছবিতে ছেলেকে খোঁজা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে
ডানকুনি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। তবু থাকতে হয় একা!

ডানকুনির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দনকাননের বাসিন্দা, ৮০ ছুঁইছুঁই অসীমা দাসের ভরসা বলতে প্রতিবেশীরা। বুধবার সেই প্রতিবেশীরাই তাঁকে নিয়ে গেলেন চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে। পড়ে যাওয়ায় মাথা ফেটে গিয়েছিল তাঁর। খবর দেওয়া হলেও ছেলে আসেননি। বৃদ্ধার আক্ষেপ, ‘‘ছেলে আমাকে দেখে না।’’

অসীমাদেবীর স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগে। তাঁর এক ছেলে, দুই মেয়ে। মেয়েরা বিবাহিত। বড় মেয়ে প্রণতি দমদম ক্যান্টনমেন্টে থাকেন। ছোট তপতী থাকেন জলপাইগুড়িতে। ছেলে প্রভাত দমদমের বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মেয়েরা তবু মাঝেমধ্যে মাকে দেখতে আসেন বলে জানান অসীমাদেবীর পড়শিরা। কিন্তু ছেলের দেখা মেলে না।

এ দিন সকালে ঘরের মধ্যে পড়ে গিয়ে অসীমাদেবীর মাথা ফাটে। নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। ভাড়াটে মদন দাস এবং তাঁর স্ত্রী লিপিকা প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান। তারপরে সকলে ভ্যানে চাপিয়ে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। একই সঙ্গে তাঁরা বৃদ্ধার ছেলের আচরণ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

অসীমাদেবীকে দু’বেলা খেতে দেন প্রতিবেশীরাই। লিপিকাদেবী বলেন, ‘‘দু’মাস ভাড়া এসেছি। আমিই মাসিমার কাপড় কেচে দিই। পাড়ার লোকেরা পালা করে খাবার দিই।’’ ময়ূখ ঘোষ নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘মাসিমা দু’মাস ধরে অসুস্থ। ছেলেকে বারবার ফোন করা হয়েছে। উনি আসতে চান না। এলেও বাড়ির দলিলের খোঁজ করেন। এ দিন ফোন করা হলে আসবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।’’ আর এক প্রতিবেশীর আক্ষেপ, ‘‘শিক্ষিত ছেলের মাকে না-দেখাটা দুর্ভাগ্যের। প্রশাসন কিছু একটা করুক।’’ প্রতিবেশীরা এ দিন পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানিয়েছেন, বৃদ্ধার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সহায়: অসীমাদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন পড়শিরাই। নিজস্ব চিত্র

বর্তমান সময়ে বহু বৃদ্ধবৃদ্ধাই একাকীত্বে ভুগছেন। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে সন্তানের অত্যাচারের কথাও প্রায়ই সামনে আসছে। এ নিয়ে চিন্তিত সমাজতত্ত্ববিদরা। বহু ক্ষেত্রেই জল গড়াচ্ছে আদালত পর্যন্ত। আদালত ভর্ৎসনাও করছে ছেলেমেয়েদের। কিন্তু ‘রোগ’ সারছে না। প্রশ্ন উঠছে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু তাঁদের দেখভালের বিষয়ে ছেলেমেয়েরা উদাসীন হয়ে পড়ছেন কী ভাবে?

বৃদ্ধার বড় মেয়ে প্রণতি বলেন, ‘‘মায়ের কাছে যাতায়াত করি। এখন বোনঝির বিয়েতে জলপাইগুড়িতে এসেছি। পড়শিরা ফোনে মায়ের অসুস্থতার কথা বলেছেন। বাড়িতে ফিরেই মায়ের কাছে যাব।’’ অসীমাদেবীর ক্ষোভ ছেলের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রভাতবাবুর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ফোন ধরেন তাঁর স্ত্রী শেফালি। তাঁর দাবি, ‘‘শাশুড়ির তিন সন্তান। বাকিদের সঙ্গেও কথা বলুন। স্বামী হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। আমিও অসুস্থ। সব সময় যাওয়া সম্ভব নয়। আগেও শাশুড়ি অসুস্থ হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম।’’ একই সঙ্গে তাঁর ক্ষোভ, ‘‘মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বলেছিলাম। রাজি হননি। আয়া রাখতেও রাজি নন। এ ভাবে পারা যায়?’’

চণ্ডীতলার বিএমওএইচ অপূর্ব সরকার জানিয়েছেন, অসীমাদেবীর বার্ধক্যজনিত সমস্যা রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত বেরনোয় সিটি স্ক্যান করা প্রয়োজন। আর প্রভাতবাবুর অপেক্ষায় না-থেকে সে ব্যবস্থাও তাঁরাই করবেন বলে পড়শিরা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Age Home Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE