বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনশনে বসেছেন গ্রামের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
দূষণের বিষ থেকে গঙ্গাকে বাঁচাতে অনশন করছিলেন জিডি অগ্রবাল ওরফে জ্ঞান স্বরূপ সানন্দ। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে। ১১১ দিন অনশনের পর বৃহস্পতিবারই ঋষিকেশের এইমস হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
হুগলির ‘অনশন দাদা’ সুশীলকুমার অবশ্য অনশন ভেঙেছেন এ দিন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ প্রশাসনের অনুরোধে চা খেয়ে অনশন ভঙ্গ করেছেন তিনি। তবে নদী ভাঙন রোধে বোল্ডার পাইলিংয়ের দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের পাশে রয়েছেন সুশীলবাবু।
এ দিন সকালেই অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন গ্রামের ৩০ জন মহিলা। তাঁদেরই একজন শম্পা ঘোড়ুই বলেন, “আমাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত আমরা অনশন চালাব। তাতে মৃত্যু হলে হোক। প্রশাসনকে অন্তত লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’’
যদিও এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের তরফে জোর করে অনশন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে। অনশনরত মহিলারা প্রায় এক সুরে বলেন, “পুলিশ, প্রশাসন এবং তার পিছনে শাসকদলের লোকজন ভয় দেখিয়ে অনশন তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। পারবে না। গ্রাম বাঁচাতে আমরা মেয়েরা এককাট্টা হয়েছি।’’
আরামবাগের সালেপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের সুশীলকুমারের অনশন শুরু হয়েছিল বুধবার সকাল থেকে। তিনি জানিয়েছেন ওই রাতেই বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য, থানার আইসি শান্তনু মিত্র এবং সালেপুর ১ প্রধান সরস্বতী সরেন তাঁকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু সুশীলবাবু সোজা ফোন করেন মহকুমাশাসকের কাছে। বলেন, ‘‘জোর করে অনশন ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। সুষ্ঠু ভাবে যাতে অনশন চালাতে পারি, সে জন্য আমাকে নিরাপত্তা দিন।’’
যদিও বিডিও বলেছেন, “দাবির বিষয়টি সেচ দফতরে জানানো হয়েছে। সে কথা জানিয়েই সুশীলবাবুকে চা খাওয়ার কথা বলেছিলাম। উনি খাননি। তবে কথা দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে অনশন ভঙ্গ করবেন।’’এ দিন সুশীল বলেন, “ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রশাসনের কর্তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন অনশন ভঙ্গ করতে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে অনশন ভঙ্গ করলেও আন্দোলন চলবে, দাবি না মেটা পর্যন্ত।’’
তবে রাজনৈতিক নেতাদের দেখলেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অনশনকারীরা। এ দিন সকালে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গুণধর খাঁড়াও গিয়েছিলেন অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ নিয়ে। গুণধর আবার সালেপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন গত বার। ফলে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।
সুশীলবাবু তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, গত পাঁচ বছর এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন তিনি একাধিকবার বোল্ডার পাইলিং-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কাজের কাজ কিচ্ছু করেননি। সুতরাং, এ বার আর তাঁর আশ্বাসে ভুলবেন না তাঁরা। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেন গুনধর। ফের সেচ দফতরের কাছে তদবির করবেন বলে আশ্বাস দেন। চিঁড়ে ভেজেনি।
পশ্চিমপাড়া গ্রামটি দ্বারকেশ্বরের বাঁধের ভিতরে। গ্রামের উত্তরে দ্বারকেশ্বরের পাড় ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে আসছে নদ। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রায় প্রতি বছর পাড় ভাঙছে দ্বারকেশ্বর। ইতিমধ্যে প্রায় ২৫০ বিঘা জমি, বাগান, বসত ভিটে তলিয়ে গিয়েছে। উত্তর পাড় বোল্ডার পাইলিং হলে তবেই গ্রামটা বাঁচতে পারে বলে তাঁদের দাবি।
মহকুমাশাসক লক্ষ্মীভব্য তানিরু বলেন, ‘‘আমি যাব। কথা বলব। নতুন করে যাঁরা অনশন শুরু করেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy