আক্রান্ত: হাসপাতােল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অসুস্থ কর্মীকে। নিজস্ব চিত্র
আলু মজুতের সময়ে হিমঘরের অ্যামোনিয়া গ্যাস লিক করায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন চার কর্মী। শুক্রবার রাতে ধনেখালির বান্না গ্রামে ওই দুর্ঘটনা ঘিরে আতঙ্ক ছড়ায়। বান্না এবং সংলগ্ন দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে হয়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতভর চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার সকালে হিমঘরটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান। সকাল ৮টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
বান্না গ্রামে ‘বলরাম’ নামে ওই হিমঘরে এমন দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে একই ভাবে গ্যাস লিক করায় দু’জন হিমঘর কর্মী মারা যান। তার আগে ২০০৯ সালেও গ্যাস লিক হয়েছিল। ওই গ্রামে আরও তিনটি হিমঘর রয়েছে। কিন্তু শুধু একটি হিমঘরেই বারবার দুর্ঘটনায় রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ মানেননি হিমঘর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের পক্ষে অরূপ ঘোষের দাবি, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা মেনে হিমঘর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। দুর্ঘটনাটি দুঃখজনক। অ্যামোনিয়ার চেম্বার চালু ছিল। সেফটি ভাল্ভ লিক করে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।’’
চুঁচুড়া সদরের মহকুমাশাসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ওই হিমঘর নিয়ে বিডিওকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ। তখন অনেক গ্রামবাসী খেতে বসেছিলেন। মুখে মুখে দুর্ঘটনার কথা ছড়াতেই তাঁরা বেরিয়ে আসেন। বেরিয়ে পড়েন পাশের জগৎনগর এবং গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দারাও। পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের অন্যত্র সরে যেতে বলে। তার মধ্যেই হিমঘরের চার কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি হওয়ায় এবং মাথা ঘুরতে থাকায় তাঁদের তিন জনকে ওই রাতেই তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে এক জনকে ভর্তি করানো হয়। সকলের অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল জানিয়েছে। তারকেশ্বর এবং চুঁচুড়া থেকে দমকল আসে। শনিবার ভোর তিনটের পর থেকে তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ কমেনি।
গ্রামবাসীদের অনেকেরই দাবি, তাঁরা লোকমুখে দুর্ঘটনার কথা শুনে নিজেরাই ঘর ছাড়েন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। পুলিশ এ কথা মানেনি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে কয়েকশো গ্রামবাসী হিমঘরের গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ভাণ্ডারহাটি-চৌতারা রোড অবরোধ করা হয়। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে।
জগৎপুর গ্রামের বাসিন্দা নীলিমা বারিকের ক্ষোভ, ‘‘রাতে ভাতের থালা ফেলে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যেতে হয়েছে। ওই হিমঘর বন্ধ করে দেওয়া হোক।’’ হিমঘর সংলগ্ন একটি জমির মালিক তরুণ দত্তের অভিযোগ, ‘‘গ্যাসে ফসলের ক্ষতি হয়। এ বার দু’বিঘে আলু মাঠেই নষ্ট হবে।’’ হিমঘর-মালিকদের পক্ষে অরূপবাবুর আশ্বাস, ‘‘কোনও চাষির ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy