Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
খুনের নালিশ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে

বিয়ের সাত মাসেই প্রাণ গেল তরুণীর

কাঁদতে কাঁদতে মাকে ফোন করেছিল মেয়ে। বলেছিল, টাকা চেয়ে মারধর করছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। মা বলেছিলেন, ‘‘কিচ্ছু ভাবিস না। তোকে কালই বাড়ি ফিরিয়ে আনব।’’

কাতর: পাপড়ির (ইনসেটে) মৃত্যুর খবর শোনার পরে। নিজস্ব চিত্র

কাতর: পাপড়ির (ইনসেটে) মৃত্যুর খবর শোনার পরে। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

কাঁদতে কাঁদতে মাকে ফোন করেছিল মেয়ে। বলেছিল, টাকা চেয়ে মারধর করছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। মা বলেছিলেন, ‘‘কিচ্ছু ভাবিস না। তোকে কালই বাড়ি ফিরিয়ে আনব।’’ তাতে মেয়ের কান্না আরও বাড়ে। বলে, ‘‘তোমাদের অমতে বিয়ে করেছি। ঘর ছেড়েছি। বাবার কাছে মুখ দেখাব কী করে!’’

কয়েক ঘণ্টা পরে অবশ্য মেয়ের মুখ দেখতেই হল বাবাকে। তবে ততক্ষণে আঠারো বছরের তরুণীর দেহে আর প্রাণ নেই।

শুক্রবার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাপড়ি গোড়ার দেহ ফেলে রেখে পালানোর অভিযোগ উঠেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। খুনের অভিযোগে পুলিশ খুঁজছে তাদের। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। কী ভাবে মৃত্যু হল, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘ওই তরুণীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করার পরে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।’’

হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানার রসিদপুরে পাপড়ির বাপের বাড়ি। বছরখানেক আগে ফেসবুকে পরিচয় হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মাধবপুরের বাসিন্দা প্রতীক গো়ড়ার। পাপড়ি তখন পড়ে নবম শ্রেণিতে। হায়দরাবাদে সোনার কাজ করে প্রতীক। প্রেমে পড়ে সাত মাস আগে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবে বলে বাড়ি ছাড়ে পাপড়ি। কয়েক দিন পরে ফোনে জানায়, সে এখন হায়দরাবাদে। প্রতীকের সঙ্গে সংসার পেতেছে।

পাপড়ির মা রীতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিয়ের সময়ে মেয়ের আঠারো বছর হয়নি। আমরা ভেবেছিলাম, পুলিশকে সব বলব। কিন্তু ছেলের বাবা আমাদের হাতে-পায়ে ধরে। মেয়ের মুখ চেয়ে সব মেনে নিয়েছিলাম। তার এই পরিণতি!’’

রীতার দাবি, বিয়ের দু’মাস ঘুরতে না ঘুরতে মেয়ে জানায়, পণের দাবি করছে ছেলের পরিবার। মাস তিনেক আগে মেয়ে-জামাই বাড়ি এলে তাদের ৫ ভরি সোনার গয়না দেন পাপড়ির বাবা-মা। কিন্তু হায়দরাবাদে গিয়ে ফের মেয়ের উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। ৮ নভেম্বর পাপড়ি-প্রতীক উলুবেড়িয়ার বাড়িতে ফেরে। অভিযোগ, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য পাপড়ির উপরে ফের চাপ শুরু হয়। পাপড়ির বাবা বৃন্দাবন বলেন, ‘‘লাখখানেক টাকা দাবি করেছিল ওরা। আমি গরিব মানুষ। পুজোপাঠ করে সংসার চালাই। তবু মেয়ের জন্য টাকাটা দেব বলেছিলাম। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’’

রীতা জানান, শুক্রবার দুপুরে তাঁকে ফোন করে পাপড়ি। অত্যাচারের কথা বলে। মা বলেন, শনিবার গিয়ে তাকে নিয়ে আসবেন বাড়িতে। কিন্তু পাপড়ি গোঁ ধরে বসে, বাড়ির অমতে বিয়ে করে আর ফেরার মুখ নেই তার। মা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন।

সেই শেষ কথা মা-মেয়ের। সন্ধের দিকে ফোন করে প্রতীক। বলে, পাপড়ির শরীর খারাপ। রীতারা যেন চলে আসেন। তাঁরা উলুবেড়িয়ায় গিয়ে দেখেন, বাড়িতে তালা ঝুলছে। এক প্রতিবেশী জানান, সকলে হাসপাতালে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে রীতা-বৃন্দাবনরা দেখেন, মেয়ের দেহে প্রাণ নেই।

পাপড়ির বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, তাঁরা থানায় গেলে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। শনিবার সকালে অবশ্য পাপড়ির স্বামী প্রতীক, শ্বশুর সঞ্জয়, শাশুড়ি আরতি, ননদ প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল ও নন্দাই পলাশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়।

হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। অভিযুক্তেরা খুব শীঘ্রই ধরা পড়বে। রাতে কেন থানায় অভিযোগ নেওয়া হল না, খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Marriage Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE