এই ক্লাবঘরেই ক্যারম খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয় আদিল। ছবি: তাপস ঘোষ।
রোজকার মতোই কাজ থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে পাড়ার ক্লাবে ক্যারম খেলতে গিয়েছিল সে। সেখানেই খেলার সময় একজনের হাতে থাকা রিভলভার থেকে গুলি ছিটকে মৃত্যু হল তার। চুঁচুড়ার ব্যান্ডেলের কলাবাজার এলাকায় মঙ্গলবার রাতে গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যুতে ফের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের হাজারো আশ্বাসেও দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য যে ক্রমশ বেলাগাম হয়ে উঠছে, তা নিয়ে প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন এলাকাবাসী।
গত দু’মাস ধরে একের পর এক খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসী। যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মঙ্গলবার রাতে গুলিতে মহম্মদ আদিল মল্লিকের (১৬) মৃত্যু। যে ক্লাবে ওই ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে পুলিশ একটি ভোজালি ও একটি কৌটো বোমা উদ্ধার করেছে। পরে তল্লাশিতে গ্রেফতার হয়েছে মহম্মদ সামসেদ নামে ওই দুষ্কৃতীও। তার কাছ থেকে পুলিশ একটি নাইন এমএম রিভলভার এবং গুলিভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাড়ার মধ্যে ক্লাবে গুলিতে মৃত্যু এবং ক্লাব থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনাই প্রমাণ করছে পুলিশের নজরদারিতে গাফিলতি রয়েছে।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘ব্যান্ডেলে কিশোর খুনের ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই একজনকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করেছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ক্লাবঘরটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ব্যান্ডেল নিমতলার বাসিন্দা মহম্মদ আদিল মল্লিক দিল্লি রোডে সুগন্ধায় একটি বিস্কুট কারখানায় কাজ করত। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ কাজ থেকে ফিরে টিফিন খেয়ে বাড়ির কাছেই ক্লাবে ক্যারম খেলতে গিয়েছিল। সেই সময় সেখানে আরও তিনজন ক্যারম খেলছিল। আদিল সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। রাত ১০টা নাগাদ হঠাৎই তাদের একজনের হাতে থাকা রিভলভার থেকে গুলি ছিটকে বেরিয়ে আদিলের মাথায় লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় সে মাটিতে পড়ে গেলে ওই দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। বাকি দুই সঙ্গী খেলোয়াড় আদিলের বাড়িতে খবর দেয়। বাসিন্দারা আদিলকে চুঁচুড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরে অবস্থা খারাপ হলে তাকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গভীর রাতে সেখানেই মারা যায় সে। ঘটনার পর তদন্তে নেমে ওই রাতেই এলাকা থেকে পুলিশ মহম্মদ সামসেদ নামে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই ক্লাবে নানা আসামাজিক কাজকর্ম হতো। দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও ছিল। আদিলের মা রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘‘কারও সঙ্গেই ছেলের ঝগরাঝাটি ছিল না। রোজই রাতে কাজ থেকে ফিরে ওই ক্লাবে গিয়ে ক্যারম খেলে বাড়ি ফিরে আসত। কিন্তু ওখানে যে খারাপ লোকেরা আসত তা এখন বুঝতে পারলাম। যারা আমার ছেলেকে মারল তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’ আদিলের পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মহকুমায় একের পর এক গুলিতে খুনের ঘটনায় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় আগের চেয়ে অচেনা, অজানা মানুষের ভিড় বেড়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের হাতেও অনায়াসেই পোঁছে যাচ্ছে অস্ত্র। যার ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে কার কখন কী হবে কেউ জানে না। তাঁদের আরও অভিযোগ, কোনও ঘটনা ঘটলেই পুলিশ প্রথমে খুব তৎপর হয়। কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই ফের সব কিছুতে ঢিলেমি চলে আসে।
অভিযোগ যে নেহাত অমূলক নয় ব্যান্ডেলের ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy