Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দ্বীপাঞ্চলে গতি আনল সাঁকো, শুরু যান চলাচল

পাকা সেতু হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বাঁশের সাঁকো। আর সেই সাঁকোই গতি নিয়ে এল হাওড়ার জয়পুরের ‘দ্বীপাঞ্চল’ বলে পরিচিত ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্‌নান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই প্রথম ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় শুরু হল যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল।

কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরীর উপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো।

কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরীর উপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো।

নুরুল আবসার ও মনিরুল ইসলাম
জয়পুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৬
Share: Save:

পাকা সেতু হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বাঁশের সাঁকো। আর সেই সাঁকোই গতি নিয়ে এল হাওড়ার জয়পুরের ‘দ্বীপাঞ্চল’ বলে পরিচিত ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্‌নান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই প্রথম ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় শুরু হল যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল।

পঞ্চায়েত দু’টি মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ নদী ঘেরা। জয়পুরের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের জন্য ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্‌নানের কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরীর উপরে একটি সেতুর দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মতো রাজ্য সরকার সেতু তৈরির পরিকল্পনাও করে। শিলান্যাস হয় ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পরিষদকে। তার পরে পরে ৯ বছর কেটে গেলেও সেতু হয়নি। ফলে, মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের জন্য এত দিন গ্রামবাসীদের ভরসা ছিল খেয়া। কিন্তু গরমে এবং শীতে মুণ্ডেশ্বরীতে জল শুকিয়ে যাওয়ায় সেই খেয়া চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। তখন নদীপথ হেঁটেই পেরোতে হয় গ্রামবাসীদের।

সেতু না হওয়ায় দুর্ভোগই ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিলেন দুই পঞ্চায়েত এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। কিন্তু খেয়া পারাপারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঘাট-মালিক শেখ লালচাঁদের উদ্যোগে গত মাসেই কুলিয়াঘাটে প্রায় সাত লক্ষ টাকায় তৈরি হয় ওই সাঁকোটি। যাঁরা সাঁকো ব্যবহার করছেন তাঁরা লালচাঁদকে পারানি দিচ্ছেন। আর গ্রামবাসীদের উদ্যোগে সেই সাঁকো দিয়ে গাড়ি নিয়ে এসে গত ২২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক ভাবে দুই পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি যাত্রিবাহী ছোট গাড়ি চালানো শুরু হয়। দ্বীপের ভিতরেই যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে গাড়িগুলি। যাত্রীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে গাড়ির সংখ্যা। বর্তমানে ১০টি গাড়ি চলাচল করছে।

অবশেষে গ্রামের রাস্তায় চলতে শুরু করল যাত্রিবাহী গাড়ি।

লালচাঁদ বলেন, “পঞ্চায়েতের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই সাঁকোটি তৈরি করেছি। তা এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে ছোট গাড়ি চলতে পারে। তবে, সাঁকোয় গাড়িতে যাত্রী পরিবহণ হচ্ছে না। শুধু জয়পুরের দিক থেকে গাড়িগুলিকে আনা হচ্ছে। গ্রামবাসীরা খুশি হয়েছেন।” কিন্তু পাকা সেতু কি দূরঅস্ত্‌? জেলা পরিষদের দাবি, যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, তাতে এখানে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের নিয়ে যে বৈঠক করেন, তাতে তিনি কুলিয়াঘাটের সেতুর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “কুলিয়ায় সেতু কী ভাবে তৈরি করা যায় সে বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সর্ব্বোচ্চ স্তরে আলোচনা চলছে।”

তবে, আপাতত সাঁকো হওয়ায় এবং গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় বেজায় খুশি গ্রামবাসীরা। আগে তাঁরা খেয়া পার হয়ে দ্বীপে এসে বাড়ির দিকে হাঁটা দিতেন। এখন তাঁরা ছোট গাড়িতে চেপে অল্প সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছচ্ছেন। তবে, এই এলাকায় পিচ বা ঢালাই রাস্তা নেই। ইট পাতা রাস্তা এবং মাটির রাস্তা দিয়েই গাছগাছালি, নদী-নালা, পুকুর-মাঠকে পাশ কাটিয়ে দ্বীপাঞ্চলে গাড়ি চলছে নিজস্ব নিয়মে। শিবতলা, উত্তর ভাটোরা প্রভৃতি স্টপে গাড়ি দাঁড়াচ্ছে।

গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসী যে খুশি তা মেনে নিলেন ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্‌নান এবং ভাটোরা দুই পঞ্চায়েতের প্রধানেরাই। ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্‌নানের প্রধান সাবিনা বেগম বললেন, “গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় আমরা রাস্তাঘাট মেরামতের কাজটি অগ্রাধিকার দিয়ে করছি। ঢালাই রাস্তার জন্যও টাকা চাওয়া হয়েছে।” ভাটোরা পঞ্চায়েতের প্রধান অর্ধেন্দু আলু বলেন, “পুরো দ্বীপ এলাকায় উত্‌সাহ দেখা দিয়েছে। ভাবতেই পারিনি এই এলাকায় কোনওদিন গাড়ি চলবে। আপাতত ইটের রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। ঢালাই রাস্তার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।”

কী বলছেন যাত্রীরা?

উত্তর ভাটোরার হেমন্ত কোলে বললেন, “আগে খেয়াঘাট থেকে বাড়ি যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটতে হত। এখন আর সেই কষ্ট নেই। আশা করি এ বার পাকা রাস্তা হবে। তবে, ভাড়াটা একটু বেশি।” সেতুর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়েছিলেন যাঁরা, সেই হারুন রশিদ, অশোক গায়েনের মতো দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দারা বলেন, “এক সাঁকোতেই এই অবস্থা। সেতু হলে মানুষের উদ্দীপনা কোথায় পৌঁছবে দেখুন।”

শেখ রাজা নামে এক গাড়ি-চালক বলেন, “রাস্তা খারাপ। যাতায়াত করতে অনেক তেল পুড়ছে। তাই বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছি। তবে, রাস্তাঘাট ভাল হলে ভাড়া কমিয়ে দেব।”

ছবি তুলেছেন রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE