আমদানি আট আনা, খরচা রুপাইয়া!
কার্যত এমনই হাল হাওড়া পুরসভার কোষাগারের। মাত্র এক বছরে ‘কুলি টাউন’ হাওড়াকে সাজাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই পুরসভার খরচ হয়ে গিয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ধারই ১০০ কোটি। রাজ্য প্রশাসন থেকে উন্নয়ন বাবদ অনুদানের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মিললেও হাতে এসেছে মাত্র ৩২ কোটি। পাশাপাশি, বিদ্যুতের বিল বাবদ সিইএসসি-র কাছে বকেয়া আরও ১৪০ কোটি। অর্থাৎ, প্রাথমিক ভাবে হাওড়া পুরসভার মোট বকেয়া প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।
কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে, তা ভেবেই এখন মাথায় হাত পুরকর্তাদের। পুরসভার এক কর্তার কথায়, “ছ’মাস আগে নবান্নে ১৩২ কোটি টাকার বিল পাঠানো হয়েছিল। পুরো টাকা আজও আসেনি। নবান্নের দিকে তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।”
এ বিষয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, “হাওড়া পুরসভাকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে মেটানো হবে। তবে বিদ্যুতের বকেয়া টাকা পুরসভাকেই মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য মেয়রকে বলেছি, এলইডি আলো বসিয়ে বিদুৎ খরচ কমাতে।”
গত বছর ডিসেম্বরে ২৯ বছরের বামফ্রন্ট বোর্ডকে সরিয়ে তৃণমূল বোর্ড দখল করার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া শহরের উন্নয়নে পুরসভার জন্য ১০০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। মেয়র রথীন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তড়িঘড়ি উন্নয়নও শুরু করেছিল তৃণমূল বোর্ড। দ্রুত শুরু হয় রাস্তাঘাটের মেরামতি ও পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প ঢেলে সাজার কাজ। একই সঙ্গে বড় রাস্তা থেকে অলি-গলি, সর্বত্র ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ত্রিফলা আলো, হাইমাস্ট আলো ও ভেপার ল্যাম্পে। সব মিলিয়ে হাওড়া শহরে পছন্দের আলো লাগাতেই খরচ হয়ে গিয়েছে ১০ কোটি টাকা।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে শুধু ত্রিফলা আলোই বসানো হয় এক হাজারটি। যার এক-একটি তৈরির খরচ পড়েছে ১২ হাজার ৫৩৫ টাকা করে। অন্য দিকে, যে ৬টি হাইমাস্ট আলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে বসানো হয়েছে, তার প্রত্যেকটির খরচ পড়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা করে। পাশাপাশি শহরের ২০০টি রাস্তা নতুন করে সারানোর কাজে খরচ হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।
এ সবের পাশাপাশি, পুরসভায় অতিরিক্ত প্রায় এক হাজার অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাঁদের বেতন দিতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে মাসে প্রায় এক কোটি টাকা। ফলে সামগ্রিক ভাবে প্রতি মাসে খরচ বেড়ে গিয়েছে আগের বামফ্রন্ট বোর্ডের তুলনায় দ্বিগুণ। পুরসভা সূত্রে খবর, আগে বামফ্রন্ট বোর্ডের যেখানে মাসে খরচ হত চার কোটি টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি টাকায়।
যদিও হাওড়া পুরসভার দাবি, আগের বোর্ডের তুলনায় নতুন বোর্ডের বাৎসরিক আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আগের বোর্ড যেখানে বছরে ৩০-৩২ কোটি টাকা আয় করতে হিমশিম খেয়ে যেত, সেখানে নতুন বোর্ড আসায় গত এক বছরে সেই আয় ৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা এক কথায় রেকর্ড।
কিন্তু তা হলে উন্নয়ন করতে গিয়ে ঠিকাদারদের কাছে যে ধার হয়েছে, তা মেটানো যাচ্ছে না কেন?
হাওড়া পুরসভার অফিসারদের বক্তব্য, ৭০ কোটি টাকা আয় করলেও মাসিক ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ায় বকেয়া ২৪০ কোটি পুরসভার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এই মুহূর্তে সরকার টাকা না দিলে ঠিকাদারদের টাকা বা বিদ্যুৎ বিল মেটানো সম্ভব নয়।
মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা নানা দিক থেকে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষকে বকেয়া সম্পত্তিকর দিয়ে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া, লাইসেন্স দফতরের আয় কী ভাবে বাড়ানো যায়, তারও চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি চিন্তাভাবনা চলছে বিদ্যুতের খরচ কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়েও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy