Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রাজনৈতিক দাদাদের হাত ধরে ‘উত্থান’

পুলিশ এড়িয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করল টোটন

রাত পোহাতেই পুলিশ আর শাসকদলের সাঁড়াশি চাপে আত্মসমর্পণ করল চুঁচুড়ার ত্রাস টোটন। বুধবার সে চুঁচুড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে। একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত এই টোটনেরই টিঁকি ছুঁতে পারছিল না চুঁচুড়া এবং চন্দননগর থানার পুলিশ। সোমবার শাসকদলের এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা আক্রান্ত হতেই বদলে যায় পরিস্থিতি।

টোটন। আত্মসমপর্র্ণের পর।—নিজস্ব চিত্র।

টোটন। আত্মসমপর্র্ণের পর।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

রাত পোহাতেই পুলিশ আর শাসকদলের সাঁড়াশি চাপে আত্মসমর্পণ করল চুঁচুড়ার ত্রাস টোটন। বুধবার সে চুঁচুড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত এই টোটনেরই টিঁকি ছুঁতে পারছিল না চুঁচুড়া এবং চন্দননগর থানার পুলিশ। সোমবার শাসকদলের এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা আক্রান্ত হতেই বদলে যায় পরিস্থিতি। অভিযোগ, কখনও দার্জিলিং, কখনও নদিয়ার কুর্পাস ক্যাম্পে পালিয়ে বেড়িয়েছে ওই দুষ্কৃতী। সম্প্রতি এলাকায় ফিরলেও পুলিশের হুঁশ ছিল না। জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য তা মানেননি। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশের ক্রমাগত চাপেই ওই দুষ্কৃতী ধরা দিয়েছে।”

কে এই টোটন বিশ্বাস?

চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের একটি স্কুলে সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। জেলার রাজনৈতিক মহলের খবর, জেলার এক প্রাক্তন বর্ষীয়ান বাম সাংসদের হাত ধরে তার উঠে আসা। মধ্য তিরিশের গোবেচারা চেহারার যুবকটি দাপিয়ে ফুটবল খেলত। বাম নেতাদের নজরে আসার পর থেকে অবশ্য ক্রমে পা থেকে সরে যায় ফুটবল। হাতে উঠে আসে বোমা। এলাকায় সিপিএমের হয়ে ভোট করানোয় দায়িত্ব বর্তায় তার কাঁধে। বাম রাজনীতিতে হুগলির এক শিক্ষক-সাংসদের রীতিমত পরিচিত ছিল সে। এলাকায় বামেদের মাটি আলগা হতেই শিবির বদলায় সে।

বর্তমান শাসকদলের ছত্রছায়ায় ‘নিরুপদ্রবে’ই ছিল সে। যদিও দলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে বারেবারেই ঠাঁই বদলায়। থ্রি-নট-থ্রি রিভালভারে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। চুঁচুড়াতেই এক পরিবারের দুই বোনকে বিয়ে করে। দুই স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি ঠাঁটবাটেই চলছিল। কাল হল তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে মাথা গলিয়ে। সমাজবিরোধীমূলক কার্যকলাপও অবশ্য থেমে ছিল না। পুলিশ সূত্রের খবর, তোলাবাজি, খুন, ডাকাতি, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ ১৫-১৬টি মামলা তার মাথায় ঝুলছে। আদালতের সমন থাকলেও, ঢিলছোড়া দূরত্বে তার আবাস হলেও চন্দননগরের ওসি অবশ্য তাকে ‘খুঁজে’ পাচ্ছিলেন না। জেলারই শাসক দলের বিধায়ক তপন মজুমদার দুষ্কৃতী বাড়বাড়ন্তের জন্য পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও থেকে পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য এ প্রশ্নে নীরব থেকেছেন।

টোটন নিজে কি বলছে? সেও আঙুল তুলেছে শাসক দলের দিকেই। তার দাবি, “গৌতমদাকে (পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার স্বামী গৌতম সরকার) শ্রদ্ধা করি। উনি ভাল লোক। আমি কোনও হামলায় ছিলাম না। রাজনীতির লোকেরাই ফাঁসিয়ে দিল। এত টাকা কি তুলতে পারি নাকি, যে ওদের দেব?’’

সপ্তগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। বললে ঝুলি থেকে অনেক বেড়াল বেরিয়ে পড়বে। আপাদমস্তক ভদ্র, শিক্ষক প্রাক্তন বাম সাংসদের হাত ধরেই টোটনের উত্থান। চুঁচুড়াবাসী সব জানেন। কাউকে অসম্মানিত করতে চাই না।” জেলা সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘সারদার যন্ত্রণায় কাতর শাসক তৃণমূল যতই ছন্নছাড়া হচ্ছে, ততই সিপিএমের প্রতি কুত্‌সা করছে।”

দুষ্কৃতীর রং বিচার নিয়ে রাজনীতির ঘোলাজল পুরভোটের মুখে এখন আরও গুলিয়ে যাচ্ছে। তবে টোটন গারদের আড়ালে যাওয়ায় চুঁচুড়া-চন্দননগরবাসী আপাতত স্বস্তিতে। তবে তা কতদিন, সেটা দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE