দিন দশেকও গেল না, সরকারি তত্ত্বাবধানে আরামবাগ ব্লকের ৯৪৫টি গরিব পরিবারের জন্য বিলি করা মুরগি-ছানার অধিকাংশই মারা গেল। ফলে, সরকারি প্রকল্পটির সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ।
মুরগি-ছানার মৃত্যুতে প্রশাসনের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকারি অর্থ অপব্যয়ের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, নির্দিষ্ট সরকারি খামার থেকে উপযুক্ত মুরগি-ছানা নেওয়ার বদলে শস্তায় মেদিনীপুরের একটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন খামার থেকে তা নেওয়ার কারণেই এই বিপর্যয়।
এ কথা উড়িয়ে দিয়েছেন হুগলি জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রবীর পাঠক। বেশি মুরগি-ছানা মারা যায়নি দাবি করে তিনি পাল্টা বলেন, “এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় আসায় আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে কিছু মুরগি-ছানা মারা যেতে পারে। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।” আরামবাগ ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক নরেন কুণ্ডু জানান, কিছু মৃত মুরগি-ছানার ময়না-তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রামে গরিব পরিবারগুলির উপার্জন বাড়াতে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প (রুরাল ব্যাকইয়ার্ড পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট) রয়েছে। এই প্রকল্পে আরামবাগ ব্লকের ৩১৫টি পরিবারপিছু ৪৫টি করে মুরগি-ছানা এবং তাদের জন্য ৪৫ কেজি করে খাবার পাওয়ার কথা। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর মুরগি-ছানা কিনে ব্লক প্রাণিসম্পদ সম্পদ দফতর, পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে বিলি করে। নিয়মমতো সেই মুরগি-ছানা কিনতে হয় সরকারি খামার থেকে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি আরামবাগ ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতর এবং আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে ৯৪৫টি পরিবারের মধ্যে ১৪ হাজার ১৭৫টি মুরগি-ছানা বিলি করা হয়। ইতিমধ্যে তার এক-তৃতীয়াংশ মারা গিয়েছে বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ। প্রকল্পের নিয়মের বাইরে গিয়ে গিয়ে সেই সময়ে বেশি পরিবারের মধ্যে মুরগি-ছানার বরাদ্দ ভাগ করে দেওয়া নিয়ে ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একটি পরিবার এক সঙ্গে ৪৫টি মুরগি-ছানা পালন করে উঠতে পারে না। যথাযথ তদারকির অভাবে মুরগি-ছানা মারা যায়। সে সব বিবেচনা করেই পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির বৈঠকে একটি ইউনিটকে তিনটি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু তার পরেও মুরগি-ছানার মৃত্যু ঠেকানো গেল না। হাতের কাছে তারকেশ্বরের বালিগোড়িতে সরকারি খামার থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে মুরগি না নিয়ে ব্যক্তি-মালিকানাধীন খামার থেকে মুরগি নেওয়া হল? জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের এক কর্তা দাবি করেন, “বালিগোড়িতে বছরে এক লক্ষ মুরগি-ছানা উৎপাদন হয়। কিন্তু গোটা জেলায় বিলির জন্য আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন হয়। তাই রাজ্য দফতরের অনুমতি নিয়েই কাছাকাছি কোনও ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার থেকে মুরগি-ছানা নেওয়া হয়।” অন্য দিকে, বালিগোড়ি খামার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে বর্তমানে মাসে ১৫ হাজার করে মুরগি-ছানা উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। মুরগি-ছানা যেখান থেকেই কেনা হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বলে মনে করছেন উপভোক্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এখনই আর মুরগি-ছানা মিলবে না। ফলে, মুরগি থেকে উপার্জনও সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy