Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত উপভোক্তা

বিলি করা বহু মুরগি ছানার মৃত্যুতে বিতর্ক

দিন দশেকও গেল না, সরকারি তত্ত্বাবধানে আরামবাগ ব্লকের ৯৪৫টি গরিব পরিবারের জন্য বিলি করা মুরগি-ছানার অধিকাংশই মারা গেল। ফলে, সরকারি প্রকল্পটির সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ। মুরগি-ছানার মৃত্যুতে প্রশাসনের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

দিন দশেকও গেল না, সরকারি তত্ত্বাবধানে আরামবাগ ব্লকের ৯৪৫টি গরিব পরিবারের জন্য বিলি করা মুরগি-ছানার অধিকাংশই মারা গেল। ফলে, সরকারি প্রকল্পটির সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ।

মুরগি-ছানার মৃত্যুতে প্রশাসনের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকারি অর্থ অপব্যয়ের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, নির্দিষ্ট সরকারি খামার থেকে উপযুক্ত মুরগি-ছানা নেওয়ার বদলে শস্তায় মেদিনীপুরের একটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন খামার থেকে তা নেওয়ার কারণেই এই বিপর্যয়।

এ কথা উড়িয়ে দিয়েছেন হুগলি জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রবীর পাঠক। বেশি মুরগি-ছানা মারা যায়নি দাবি করে তিনি পাল্টা বলেন, “এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় আসায় আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে কিছু মুরগি-ছানা মারা যেতে পারে। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।” আরামবাগ ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক নরেন কুণ্ডু জানান, কিছু মৃত মুরগি-ছানার ময়না-তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রামে গরিব পরিবারগুলির উপার্জন বাড়াতে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প (রুরাল ব্যাকইয়ার্ড পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট) রয়েছে। এই প্রকল্পে আরামবাগ ব্লকের ৩১৫টি পরিবারপিছু ৪৫টি করে মুরগি-ছানা এবং তাদের জন্য ৪৫ কেজি করে খাবার পাওয়ার কথা। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর মুরগি-ছানা কিনে ব্লক প্রাণিসম্পদ সম্পদ দফতর, পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে বিলি করে। নিয়মমতো সেই মুরগি-ছানা কিনতে হয় সরকারি খামার থেকে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি আরামবাগ ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতর এবং আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে ৯৪৫টি পরিবারের মধ্যে ১৪ হাজার ১৭৫টি মুরগি-ছানা বিলি করা হয়। ইতিমধ্যে তার এক-তৃতীয়াংশ মারা গিয়েছে বলে উপভোক্তাদের অভিযোগ। প্রকল্পের নিয়মের বাইরে গিয়ে গিয়ে সেই সময়ে বেশি পরিবারের মধ্যে মুরগি-ছানার বরাদ্দ ভাগ করে দেওয়া নিয়ে ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একটি পরিবার এক সঙ্গে ৪৫টি মুরগি-ছানা পালন করে উঠতে পারে না। যথাযথ তদারকির অভাবে মুরগি-ছানা মারা যায়। সে সব বিবেচনা করেই পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির বৈঠকে একটি ইউনিটকে তিনটি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কিন্তু তার পরেও মুরগি-ছানার মৃত্যু ঠেকানো গেল না। হাতের কাছে তারকেশ্বরের বালিগোড়িতে সরকারি খামার থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে মুরগি না নিয়ে ব্যক্তি-মালিকানাধীন খামার থেকে মুরগি নেওয়া হল? জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের এক কর্তা দাবি করেন, “বালিগোড়িতে বছরে এক লক্ষ মুরগি-ছানা উৎপাদন হয়। কিন্তু গোটা জেলায় বিলির জন্য আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন হয়। তাই রাজ্য দফতরের অনুমতি নিয়েই কাছাকাছি কোনও ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার থেকে মুরগি-ছানা নেওয়া হয়।” অন্য দিকে, বালিগোড়ি খামার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে বর্তমানে মাসে ১৫ হাজার করে মুরগি-ছানা উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। মুরগি-ছানা যেখান থেকেই কেনা হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বলে মনে করছেন উপভোক্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এখনই আর মুরগি-ছানা মিলবে না। ফলে, মুরগি থেকে উপার্জনও সম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chicken arambag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE