Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিপজ্জনক বলেই দায় সেরেছে প্রশাসন

মেরামতির অপেক্ষায় দিন গুনছে উদয়নারায়ণপুরের বকপোতা সেতু

গত বছর জুন মাস থেকে যান চলাচল বন্ধ আছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বকপোতা সেতুতে। দামোদরের উপরে জীর্ণ এই সেতুর দু’টি স্ল্যাবের মাঝখানে ফাটল ধরে। তারপরেই সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় রাজ্যের পূর্ত (সড়ক) দফতর।

সেতুর উপরে বিপজ্জনক ফাঁক। নজর নেই প্রশাসনের। ছবি: সুব্রত জানা।

সেতুর উপরে বিপজ্জনক ফাঁক। নজর নেই প্রশাসনের। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

গত বছর জুন মাস থেকে যান চলাচল বন্ধ আছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বকপোতা সেতুতে। দামোদরের উপরে জীর্ণ এই সেতুর দু’টি স্ল্যাবের মাঝখানে ফাটল ধরে। তারপরেই সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় রাজ্যের পূর্ত (সড়ক) দফতর।

সেতুর এক দিকে উদয়নারায়ণপুর। অন্য দিকে জগৎবল্লভপুর। উদয়নারায়ণপুরের দিকে সেতুর সামনে পূর্ত (সড়ক) দফতর পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রেখেছে যাতে কোনও গাড়ি চলাচল করতে না-পারে। একইসঙ্গে সেতুটিতে যান চলাচল নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি লটকে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উদয়নারায়ণপুরের সঙ্গে যেমন জগৎবল্লভপুর, ডোমজুড় এবং হাওড়া শহরের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, বিপাকে পড়েছেন হুগলির একাংশের বাসিন্দারাও। তাঁদেরও এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

বকপোতা সেতু তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সেতুটি হাওড়ার সঙ্গে হুগলির যোগাযোগের অন্যতম প্রধান করিডর। প্রতিদিন প্রচুর গাড়ি চলাচল করত। তারকেশ্বর-হাওড়া, রামপুর-হাওড়া ভায়া বুড়ুল এবং জগৎবল্লভপুর, উদয়নারায়ণপুর-হরিপাল প্রভৃতি রুটের বাস সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করত। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসার জন্য হুগলির বাসিন্দাদের এই সেতু পার হতে হয়। সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রামপুর-হাওড়া, তারকেশ্বর হাওড়া প্রভৃতি রুটের বাস রাজাপুর হয়ে যাতায়াত করছে। ফলে বাসগুলিকে অন্তত ৩২ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

সেতুটি বহু বছর ধরে জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় আরএসপি-র স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের অনুরোধে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের পূর্ত (সড়ক) দফতরের দলীয় মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী সেতু পরিদর্শনে আসেন। ওইসময়ে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দেন পুরোন সেতু সংস্কার হবে না। পাশে নতুন সেতু হবে। জরুরী ব্যবস্থা হিসাবে অবশ্য পুরোন সেতু সংস্কারের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা তিনি বরাদ্দ করেন।

২০১০ সালের মাঝামাঝি নতুন সেতুর নকশা ও খরচ চূড়ান্ত করে তা অর্থ দফতরের কাছে পাঠায় পূর্ত (সড়ক) দফতর। অর্থ দফতর ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। অর্থ দফতরের কাছ থেকে ফাইল অনুমোদিত হয়ে আসার পরে বেঁকে বসেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এইসব বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জমির মাঝখান দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা তাঁরা হতে দেবেন না। প্রয়োজনে তাঁরা আদালতে যাবেন। মূলত তাঁদের আপত্তিতেই পূর্ত দফতর সেতুর নকশা পরিবর্তন করে। ফলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকায়। অর্থ দফতর এই টাকাও অনুমোদন করে। রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক কর্তা জানান, প্রস্তাবিত নতুন সেতুর অ্যাপ্রোচ রাস্তা করার জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। পুরো জমি না পেলে সেতুর কাজ শুরু করা যাবে না।

এই অবস্থায় পুরনো সেতুর উপর দিয়েই যান চলাচল করতে থাকে। কিন্তু তা-ও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার পরিবহন ব্যবস্থাটিই ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো সেতুটি ফের মেরামত ফের যান চলাচল করানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মত দেননি। ফলে এর পাশে যে নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়ে গেলে সেটিই দ্রুত শুরু করা হবে। বাসিন্দাদের আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal udaynarayanpur bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE