Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে

হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় জওয়ানকে মারধর

ভরা বাজারে পুলিশের হাতে বিএসএফ জওয়ানের মার খাওয়ার সাক্ষী থাকলেন কয়োকশো মানুষ। ওই জওয়ানের ‘অপরাধ’, পিছন থেকে বার বার গাড়ির হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ, সেই কারণে গাড়ি থেকে নেমে এসে তিন পুলিশ কর্মী স্থানীয় বাদলকোনা গ্রামের বাসিন্দা তয়ন যশ নামে ওই বিএসএফ জওয়ানকে তাঁর স্ত্রীর সামনেই রিভলভারের বাঁট দিয়ে বেদম মারধর করে।

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে আহত জওয়ান। ছবি: মোহন দাস।

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে আহত জওয়ান। ছবি: মোহন দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

ভরা বাজারে পুলিশের হাতে বিএসএফ জওয়ানের মার খাওয়ার সাক্ষী থাকলেন কয়োকশো মানুষ। ওই জওয়ানের ‘অপরাধ’, পিছন থেকে বার বার গাড়ির হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ, সেই কারণে গাড়ি থেকে নেমে এসে তিন পুলিশ কর্মী স্থানীয় বাদলকোনা গ্রামের বাসিন্দা তয়ন যশ নামে ওই বিএসএফ জওয়ানকে তাঁর স্ত্রীর সামনেই রিভলভারের বাঁট দিয়ে বেদম মারধর করে। তয়নকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে আরামবাগের পুরনো বাজার এলাকায়। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও তয়নের স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁরা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি। উল্টে মিটমাট করে নিত চাপ দেওয়া হয়।

তবে এ দিনই রাত ৮টা নাগাদ স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি থেকে জনা তিনেক পুলিশ কর্মী হাসপাতালে তয়নকে দেখতে গেলে ফের গোলমাল বাধে। তয়নের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের উপরে চড়াও হন। একজনকে মারধরও করা হয় বলে ওই পুলিশকর্মীদের অভিযোগ। খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন আরামবাগ থানার আইসি। তয়নের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, পুলিশ এসে তাঁদের উপরে চড়াও হয় ও লাঠি চালায়। কয়েকজন তাতে জখম হন। যদিও এসিডিপিও লাঠি চালনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতাল চত্বরে গোলমাল হচ্ছে দেখে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। লাঠি চার্জ হয়নি।”

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কিসানগঞ্জে পোস্টিং তয়ন একমাসের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। আজ, শুক্রবার তাঁর কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতি তাই কেনাকাটা করতে স্ত্রী পূজাকে নিয়ে আরামবাগ শহরে গিয়েছিলেন। শহরের পুরোন বাজারে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। বাজার সংলগ্ন পি সি সেন রোডটি সংকীর্ণ এবং ঘিঞ্জি। মোটর সাইকেলের পিছনে স্ত্রীকে বসিয়ে যাওয়ার সময় পিছনের মোটর সাইকেল তাই পাশ দিতে পারছিলেন না তয়ন। বার বার হর্ন দিচ্ছিল পিছনের মোটর সাইকেলটি।

এ দিন হাসপাতালে শুয়ে তয়ন জানান, পিছনে কে বা কারা আছে তা না দেখেই বলেছিলাম, ‘বার বার হর্ন দেবেন না। দেখছেন তো পাশ দেওয়ার জায়গা নেই’। তাঁর অভিযোগ, “এর পরেই দেখি উর্দিধারী তিন পুলিশ পিছন থেকে দৌড়ে এসে আমার মোটর সাইকেলের চাবি খুলে নিলেন। নিজের অপরাধ জানতে চেয়ে চাবি ফেরত চাইতেই এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন আমাকে।” তয়নের স্ত্রী পূজাদেবীর অভিযোগ, “স্বামী বিএসএফে কাজ করেন জানিয়ে আমি ওদের হাতে পায়ে ধরেছি। কিন্তু আমাকে ঠেলে দিয়ে ওরা স্বামীকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারছল। লোকজন জড়ো হতে দেখে হঠাৎ ওরা তাদের বন্দুকের গুলি চুরি করেছে বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারতে মারতে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে চলে যায় স্বামীকে। পরে আশপাশের লোকজন ও আত্নীয়রা ফাঁড়িতে গিয়ে এর প্রতিবাদ করলে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” এর পর আহত তয়নকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। বন্দুকে গুলির বিষয়ে পরে জানা যায়, পুলিশ তয়নকে মারধরের সময় কোনওভাবে তাঁদের একজনের কোমরের খাপে থাকা বন্দুকের কয়েকটি গুলি পড়ে যায়। একটি গুলি তারা খুঁজে পায়নি। পরে অবশ্য সেটি স্থানীয় লোকজন খুঁজে পেয়ে পুলিশকে ফেরতও দিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভিড়ে ঠাসা পি সি সেন রোডে প্রায়ই পুলিশের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। প্রচণ্ড হর্ন দিতে দিতে তাঁরা যাওয়া আসা করে। রাস্তায় কোনও বাধা পেলেই মারধর করে।

লজে ভাঙচুর। আপত্তিকর কাজকর্ম চালানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্যামপুরের ৫৮ গেট এলাকার একটি লজে ভাঙচুর চালালেন বাসিন্দারা। এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে তাঁরা বিক্ষোভও দেখান। পুলিশ লজের মালিক ও ম্যানেজরকে গ্রেফতার করে। যদিও উদাসীনতার অভিযোগ পুলিশ মানেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

horn protest bsf jawan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE