Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝুলি শূন্য, কারণ খুঁজছে এবিভিপি

জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় ছাত্রভোটে সাফল্য পেয়েছে এবিভিপি। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে দাগই কাটতে পারল না বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন। যেখানে রাজ্য জুড়ে বিজেপি-র উত্থান হচ্ছে, সেখানে কেন এই ছবি— তার উত্তর খুঁজতে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে এবিভিপি-র অন্দরে। দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে আগামী সপ্তাহের গোড়ায় বৈঠকেও বসতে চলেছে এবিভিপি। সেখানে থাকার কথা সংগঠনের কলেজ ইউনিটগুলোর সভাপতিদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৩
Share: Save:

জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় ছাত্রভোটে সাফল্য পেয়েছে এবিভিপি। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে দাগই কাটতে পারল না বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন। যেখানে রাজ্য জুড়ে বিজেপি-র উত্থান হচ্ছে, সেখানে কেন এই ছবি— তার উত্তর খুঁজতে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে এবিভিপি-র অন্দরে। দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে আগামী সপ্তাহের গোড়ায় বৈঠকেও বসতে চলেছে এবিভিপি। সেখানে থাকার কথা সংগঠনের কলেজ ইউনিটগুলোর সভাপতিদের।

শুরুটা অবশ্য খারাপ ছিল না। ইউনিট গড়ে না গড়েই গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়, নয়াগ্রামের মতো কলেজে বেশিরভাগ আসনে প্রার্থী দিয়ে টিএমসিপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল এবিভিপি। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে মাঠে নামেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। কোমর বাঁধেন টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্বও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিকে বারবার ছুটতে হয় গোয়ালতোড়, গোপীবল্লভপুরে। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতে হয়। বলতে হয়, সব কিছু হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।

এবিভিপি সূত্রে খবর, সদ্য সমাপ্ত কলেজ ভোটে গোপীবল্লভপুরে ১৭টি আসনে, গোয়ালতোড়ে ১৫টি, কমার্স কলেজে ১০টি, খড়্গপুরে ৯টি, হিজলিতে ৮টি, নয়াগ্রামে ৫টি, বেলদা কলেজে ৬টি আসনে তাদের প্রার্থী ছিল। তারপরেও কেন শূন্য হাতে ফিরতে হল? এবিভিপি-র জেলা নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, সর্বত্র মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াই দেওয়া যায়নি। বিজেপির ছাত্র সংগঠনের এক জেলা নেতার ব্যাখ্যা, টিএমসিপির বিরুদ্ধে লড়তে হলে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেই লড়াই করতে হবে। আক্রমণ হবে। তবে প্রতিরোধ না করে তৃণমূলের ভয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে আসা চলবে না। পালিয়ে এলে ছাত্র-সমর্থনকে ভোটবাক্সে বন্দি করা যায় না। বেশির ভাগ কলেজে তাই হয়েছে।

সন্ত্রাসের অভিযোগও তুলছে এবিভিপি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদারের দাবি, “যেখানে যেখানে আমরা হেরেছি, সেখানে সামান্য ব্যবধানেই হেরেছি। আর সেটা হয়েছে টিএমসিপি-র সন্ত্রাসের কারণে।” এবিভিপি-র দুই মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক অসীম মিশ্র বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ছিল না। কমার্স কলেজে আমাদের দু’জন প্রার্থীকেই ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বেলদা কলেজে একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। টিএমসিপির জুলুমের কথা পুলিশকে বারবার জানিয়েও সুরাহা হয়নি।” অসীমের দাবি, “জঙ্গলমহলের তিন কলেজ নিয়ে এ বার আমরা আশায় ছিলাম। নয়াগ্রাম কলেজের ছাত্র সংসদে আমাদের আসা নিশ্চিতই ছিল! ওখানে সকাল থেকেই ব্যারিকেড করে রাখা হল। ফলে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে কলেজে ঢুকতেই পারলেন না। কিছু কলেজে সায়েন্টিফিক রিগিংও হয়েছে। রাতারাতি প্রার্থীদের সিরিয়াল নম্বর বদলে দেওয়া হয়েছে।” এবিভিপির জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতিরও অভিযোগ, “পুলিশ-প্রশাসন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের হয়ে কাজ করেছে। ছাত্রভোটে আমরা হারিনি, আমাদের হারানো হয়েছে!”

পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৬টি কলেজের মধ্যে ২৪টি কলেজের ছাত্র সংসদ পেয়েছে টিএমসিপি। বাকি ২টি কলেজের মধ্যে চাঁইপাট কলেজ দখলে রাখতে পেরেছে এসএফআই। সবং কলেজ দখলে রাখতে পেরেছে সিপি। গতবার তিনটি কলেজ বিরোধীদের দখলে ছিল। এ বার কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ সিপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। এদিকে, ছাত্রভোটে এবিভিপি খাতা খুলতে না পারায় শুধু টিএমসিপি নয়, খুশি অন্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোও। কেমন? এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার দাবি, “আমরা আগে থেকেই জানতাম, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ওরা দাগ কাটতে পারবে না! কারণ, ছাত্রসমাজ ওদের পাশে নেই।” তাঁর কথায়, “টিএমসিপি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত। ওদের পুরনো কর্মীদের অনেকেই নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ বলে শুনেছি। সেই ক্ষোভ থেকেই হয়তো কয়েকটি কলেজে কয়েকজন এবিভিপিতে যোগ দিয়েছেন! প্রার্থীও হন। তবে এ ভাবে নির্বাচনে জেতা যায় না।” সৌগত বলেন, “এসএফআই কর্মীরা আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাঁরা ক্ষমতার জন্য সংগঠন করেন না।”

ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে এবিভিপি কোথায়? টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে রাতারাতি কয়েকজন শিবির বদলেছেন এই তো! সারা বছর ছাত্রছাত্রীদের পাশে না থেকে, ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল না করে আচমকা উড়ে এসে জুড়ে বসে ভোটে জেতা যায় না!” টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির কটাক্ষ, “বেড়ালকে বাঘ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল! তা তো হয় না। বাঘ বাঘই থাকে। বেড়াল বেড়ালই থাকে। নির্বাচনেই সব প্রমাণ হয়ে গেল!”

এবিভিপির এক জেলা নেতা মানছেন, “মাস কয়েক আগেই কলেজ ইউনিটগুলো খোলা হয়েছিল। কম সময়ের মধ্যে আমরা সবটা গুছিয়ে উঠতে পারিনি।” তাঁর দাবি, “আগামী বছর এই সন্ত্রাস, এই অত্যাচারের যোগ্য জবাব পাবে টিএমসিপি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tpcp west midnapore college vote abvp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE