কেশিয়াড়িতে ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকির পারাপার।
আজ, বৃহস্পতিবার নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার উপর ভসরাঘাট সেতুর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সেতু হলে মেদিনীপুর থেকে নয়াগ্রামের দূরত্ব অনেকটাই কমবে। আগে কেশিয়াড়িতে সুবর্ণরেখা পেরোতে ভরসা ছিল ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’। এই অস্থায়ী সেতু বানাতে প্রতি বছর জেলা পরিষদের কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হত। সেতু পেরোতে টাকাও দিতে হত। বর্ষায় সেতু জলে ভেসে যাওয়ায় বাড়ত সমস্যা। সেই সময় গোপীবল্লভপুর হয়ে দীর্ঘপথ উজিয়ে প্রশাসনিক বা পারিবারিক কাজে মেদিনীপুর আসতে হত। এ বার সেই দুর্ভোগ মিটবে বলেই আশা স্থানীয়দের।
বর্ষায় সুবর্ণরেখার ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’ জলে ডুবে যাওয়ায় এতদিন বছরে দু’তিন মাস বন্ধ থাকত নদী পারাপার। জরুরি কাজে মেদিনীপুর আসতে হলে বাধ্য হয়ে নয়াগ্রাম থেকে প্রথমে গোপীবল্লভপুর, তারপর মেদিনীপুর আসতে হত। দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। বছরের অন্য সময় ফেয়ার ওয়েদার সেতু ব্যবহার করলেও দিতে হত ভাড়া। নতুন সেতু দিয়ে নয়াগ্রাম থেকে কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর হয়ে মেদিনীপুর এলে দূরত্ব কমে হবে প্রায় ৬২ কিলোমিটার। দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ২৩ কিলোমিটার।
২০০৯ সালে জোলা পরিষদের উদ্যোগে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’ তৈরি শুরু হয়। প্রতি বছর বর্ষায় সেতু জলে ভেসে যেত। ফলে পরের বছর ফের তৈরি করতে হত নতুন কাঠের সেতু। কোনও বছর ৩০ লক্ষ, কোনও বছর ২০ লক্ষ টাকা খরচ হত এই সেতু তৈরিতে। অবশ্য সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করলেই দিতে হত টাকা। দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর সেতু নির্মাণের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু কমেছে সেতু থেকে আয়ের পরিমাণও।
২০০৯ সালে যেখানে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, সেখানে ভাড়া বাবদ পাওয়া গিয়েছিল ১৫ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। পরের বছর সেতু নির্মাণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেতু নিলাম করে পাওয়া যায় ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকায়। উল্লেখ্য, প্রতি বছর নিলাম করে ফেয়ার ওয়েদার সেতু কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হত। ওই বেসরকারি সংস্থা প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জেলা পরিষদকে দেয়। পরিবর্তে সেতু ব্যবহারকারী প্রত্যেকের থেকে ভাড়া নিত ওই সংস্থা।
জেলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১১-১২ আর্থিক বছর পর্যন্ত এই সেতু নির্মাণ করতে জেলা পরিষদের ব্যয় হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৯ হাজার ৭৯০ টাকা। আর নিলাম থেকে অর্থ মিলেছে ৪৫ লক্ষ টাকা। অর্থাত্ জেলা পরিষদের ৪১ লক্ষ ৯ হাজার ৭৯০ টাকা লোকসান হয়েছে। যা দেখে একসময় জেলা পরিষদ ফেয়ার ওয়েদার সেতু নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। উল্টে নিলামে যোগদানকারীদের জানানো হয়, সেতু নির্মাণ করতে হবে তাঁদের খরচেই। আর যাত্রী পারাপার করেই তা তুলতে হবে। এ বার পাকা সেতু নির্মাণ হওয়ায় জেলা পরিষদের খরচ অনেকটাই বাঁচল।
নতুন সেতুর জন্য উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষও। নয়াগ্রামের বাসিন্দা বঙ্কিম ভক্তার কথায়, “দৈনন্দিন কাজে খড়্গপুর, মেদিনীপুর, বেলদা যেতেই হত। নদী পারাপার করতেই মাসে কয়েকশো টাকা খরচ হত। খুব অসুবিধের মধ্যে পড়তাম। টাকার অভাবে অনেক সময় যাতায়াত করতেও পারতাম না। এ বার সমস্যা কমবে।” কেশিয়াড়ির বাসিন্দা সত্য হাজরা বলছেন, “আমাদের বেশি নয়াগ্রাম যেতে হয় না এটা ঠিক, কিন্তু নয়াগ্রামের মানুষকে তো আসতেই হয়। ফলে আমাদের কিছুটা উপকার হয়েছে, কিন্তু নয়াগ্রামের উপকার হয়েছে সব থেকে বেশি।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “সেতু তৈরি হওয়ার ফলে দু’টি এলাকার মধ্যে দুরত্ব কমল অনেকটাই। বর্ষায় আর আটকে থাকতে হবে না। মানুষের খরচও কমল।” নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy