ভোটের আগে মনোনয়ন পর্বেই দুই মেদিনীপুরের বেশির ভাগ কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও তারা দাপট বজায় রেখেছে। তবু ছাত্রভোটের আগে চিন্তা যাচ্ছে না তাদের! স্বস্তিতে নেই তৃণমূল নেতৃত্বও।
টিএমসিপি-র চিন্তা মূলত জঙ্গলমহল এলাকার তিন কলেজ নিয়েনয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়। এই তিন কলেজেই টিএমসিপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। সম্প্রতি জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পুরুলিয়ার দুই কলেজের ভোটে পদ্মফুল ফোটে। এ জেলার জঙ্গলমহলে তাই এবিভিপিকে ঠেকাতে বাড়তি তৎপর টিএমসিপি।
আজ, বৃহস্পতিবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার আগে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সম্প্রতি গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়ের মতো এলাকায় গিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রভোট নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দলের নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন: সব কিছু হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না! ছাত্রভোট নিয়ে কি দলও উদ্বেগে?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু বলছেন, “না, না। তা থাকবে কেন? উদ্বেগের কী আছে?” তা হলে কেন গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়ের মতো এলাকায় গিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রভোট নিয়ে বৈঠক করতে হল? জেলা সভাপতির জবাব, “সাংগঠনিক ব্যাপারে কিছু বলব না!”
তবে শুধু তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বই নয়, জঙ্গলমহলের কলেজে একাধিপত্য ধরে রাখতে ঘুম ছুটছে টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্বেরও। বুধবার সকালেই গোয়ালতোড় গিয়েছিলেন সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। নেতা কর্মীদের নিয়ে তিনি বৈঠক করেন। প্রকাশ্যে অবশ্য রমাপ্রসাদ দাবি করছেন, এবিভিপিকে নিয়ে তাঁরা এতটুকুও চিন্তিত নন। তাঁর কথায়, “ওদের নিয়ে অযথা ভাবতে যাব কেন! কার শক্তি বেশি, কার শক্তি কম, তার প্রমাণ নির্বাচনেই হয়ে যাবে!”
পশ্চিম মেদিনীপুরে সবমিলিয়ে ২৬টি কলেজের ছাত্র সংসদে ভোট হওয়ার কথা আজ, বৃহস্পতিবার। অবশ্য ১৫টি কলেজে ভোটাভুটির প্রয়োজন হচ্ছে না। এই সব কলেজে বিনা লড়াইয়ে জিতে গিয়েছে টিএমসিপি। কারণ, কলেজগুলোয় শুধুমাত্র শাসক দলের ছাত্র সংগঠনেরই প্রার্থী ছিল। ভোট হবে বাকি ১১টি কলেজে। এর মধ্যেও আবার কয়েকটি কলেজের ছাত্র সংসদ কার্যত টিএমসিপির দখলে চলে গিয়েছে। যেমন, মেদিনীপুর গোপ কলেজ। কারণ, এই কলেজে যে সংখ্যক আসনে ভোট হচ্ছে, সেই সংখ্যক আসনে হারা জেতার উপর সংসদ কার দখলে থাকবে তা নির্ভর করে না।
কয়েক’টি কলেজে অবশ্য শাসক দলের ছাত্র সংসদকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। যেমন, মেদিনীপুর কমার্স কলেজ, সবং কলেজ, বেলদা কলেজ, খড়্গপুর কলেজ, নয়াগ্রাম কলেজ, গোপীবল্লভপুর কলেজ, গোয়ালতোড় কলেজ, চাঁইপাট কলেজ। এর মধ্যে কমার্স কলেজ এবং সবং কলেজের ছাত্র সংসদ ছিল ছাত্র পরিষদের দখলে। অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও গতবার এই দুই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করতে পারেনি টিএমসিপি। অন্য দিকে, চাঁইপাট কলেজের ছাত্র সংসদ ছিল এসএফআইয়ের দখলে। অভিযোগ, ছাত্র সংসদের দখল পেতে গতবার এখানেও মরিয়া হয়ে উঠেছিল টিএমসিপি। এমনকী, এক সময় পুনর্গণনারও দাবি জানিয়ে ছিল তারা। শেষমেশ অবশ্য ছাত্র সংসদের দখল নেয় এসএফআই।
এ বার নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে জঙ্গলমহলের তিন কলেজ। গোয়ালতোড়ে ২৬টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে তাদের প্রার্থী রয়েছে বলে দাবি করেছে এবিভিপি। লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি কপালে ভাঁজ ফেলেছিল তৃণমূলের। এই অনুকূল হাওয়ার ফায়দা নিতে এবিভিপি আসরে নেমে পড়ায় সেই ভাঁজ আরও বড় হয়েছে। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, এমনিতেই বেশির ভাগ কলেজে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। যে সব কলেজে টিএমসিপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে, সেখানেও ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। জোরজুলুম চলছে। আসলে টিএমসিপি বুঝতে পেরেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই সব কলেজে তাদের পরাজয় নিশ্চিত! যদিও বিরোধীদের সব অভিযোগই নস্যাৎ করছে টিএমসিপি।
লাল-সবুজের লড়াইয়ে এ বার ভাগ বসিয়েছে গেরুয়া। কয়েক’টি কলেজে মাথা তুলেছে এবিভিপি। এবিভিপির এই উত্থানের প্রভাব পশ্চিম মেদিনীপুরের ছাত্রভোটে পড়ে কি না, গেরুয়া শিবির এ জেলার কলেজে খাতা খুলতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy