Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লরির দখলে জাতীয় সড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা

নিষেধাজ্ঞা রয়েছে শুধুমাত্র নোটিসেই। পার্কিং জোন ছাড়াই জাতীয় সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে লরি, ডাম্পার। লেন আটকে লরি দাঁড়িয়ে থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার।

৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এ ভাবেই দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকে লরি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এ ভাবেই দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকে লরি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞা রয়েছে শুধুমাত্র নোটিসেই।

পার্কিং জোন ছাড়াই জাতীয় সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে লরি, ডাম্পার। লেন আটকে লরি দাঁড়িয়ে থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার। গত শনিবার রাতে কোলাঘাট থানার সামনেই হাওড়া-খড়্গপুর ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় হাওড়াগামী লেনের ডানদিকে থাকা রেলিংয়ের একাংশ ভেঙে যায়। পুলিশ আসার আগেই লরি নিয়ে পালায় চালক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোলাঘাটের রূপনারায়ণ সেতু থেকে বরদাবাড় পর্যন্ত অংশে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ি চালকদের সাবধান করতে ওই এলাকার বেশ কিছু জায়গায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার নোটিসও ঝুলিয়েছে। কিন্তু নোটিস দেওয়াই সার, নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই জাতীয় সড়কের যত্রতত্র লেন আটকে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, ডাম্পার-সহ বিভিন্ন গাড়ি।

পুলিশের দাবি, দিনে-রাতে জাতীয় সড়কে নজরদারি চালানো হয়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ের কাছে জাতীয় সড়কের ফ্লাইওভারের অদূরে প্রায়ই পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নজরদারি এড়িয়েই বাড়ছে দুর্ঘটনা। ওই এলাকায় নতুন বাতিস্তম্ভ লাগানো হলেও এখনও সেখানে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হয়নি। ফলে আঁধার নামলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে ওই এলাকা।

জাতীয় সড়ক ধরে খড়্গপুরের দিকে একটু এগোলেই দেউলিয়া, সাগরবাড় এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেল। জাতীয় সড়কের ধারে ধাবাগুলির সামনের সড়কে একদিকের বেশ কিছুটা অংশ দখল করে সার দিয়ে লরি দাঁড় করানো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদীর সেতু পার হওয়ার পরে সড়কের ধারে একের পর এক ধাবা ও বেশ কিছু গাড়ি সারানোর গ্যারাজ গজিয়ে উঠেছে। এদের বেশিরভাগই জাতীয় সড়কের ধারে সরকারি জমি, এমনকি সেচ দফতরের খালের একাংশ জায়গা বেদখল করে গড়ে উঠেছে। ধাবা বা গ্যারাজের সামনে সড়কের একাংশ দখল করে লরি দাঁড় করিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন চালক-খালাসিরা। ফলে সড়কের লেনগুলি সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।

জাতীয় সড়কের পাশে কোলাঘাটের বড়িশা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিত্‌ দাসের অভিযোগ, “কোলাঘাট সেতু পার হওয়ার পর ওই এলাকায় সড়কের ধারে কয়েক বছরের মধ্যে একাধিক ধাবা ও হোটেল চালু হয়েছে। এইসব ধাবার সামনে সার দিয়ে লরি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে জাতীয় সড়কে রাতে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক।” তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ টহল দিলেও ওই লরিগুলি সরাতে কোনও ব্যবস্থা নেয়না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।” একই বক্তব্য কোলাঘাটের খাড়িশা গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সানকিরও। সঞ্জয়ের কথায়, “জাতীয় সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে ধাক্কা মারার জেরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে আমরাও আতঙ্কে রয়েছি।”

কোলাঘাটের দেউলিয়া বাজারের কাছে পানশিলা সেতুর কাছে সড়কের পাশেই প্রতিদিন ভোরবেলায় চলে মাছের বিকিকিনি। ওই মাছের আড়তের সামনে জাতীয় সড়কের একাংশ দখল করে প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রচুর লরি দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে ওইসব এলাকায় গাড়ি চলাচল বিপজ্জনক হয়ে ওঠে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাছাড়াও জাতীয় সড়কের দেউলিয়া বাজার, বরদাবাড় হয়ে পাঁশকুড়া পর্যন্ত এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে দু’দিকেই বেশকিছু ধাবা ও হোটেল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সড়কের হাওড়া থেকে খড়গপুরগামী লেনের দিকে দেহাটি নিকাশি খালের একাংশ বেদখল করে বেশ কিছু ধাবা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। ওইসব ধাবার সামনে জাতীয় সড়কের একাংশ দখল প্রায়ই লরি দাঁড়িয়ে থাকায় অন্য গাড়ির চলাচলের পথ কমে যায়। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। যদিও ধাবা মালিকদের দাবি, এখানে খাওয়ার জন্য লরি চালক-খালাসিরা সড়কের একধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। খুব বেশি সময়ও তাঁরা থাকে না। ফলে ধাবাগুলির জন্য সড়কে গাড়ি চলাচলের অভিযোগ ঠিক নয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনের পর দিন জাতীয় সড়কের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এরফলে জাতীয় সড়ক আগের চেয়ে অনেক চওড়া হলেও ও একমুখী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনা কমেনি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “জাতীয় সড়কের উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। প্রয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mondal tamluk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE